রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

তলপেট ও কোমর ব্যাথা ( পেলভিক পেইন) এর কারন

২৩-০৮-২০২০

তলপেট ও কোমর ব্যাথা ( পেলভিক পেইন) এর কারন

পেলভিক পেইন (শ্রোণী প্রদাহ) কি?
যদি আপনার নাভির নিচ থেকে শুরু করে পায়ের ওপর পর্যন্ত ব্যথা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার পেলভিক পেইন (শ্রোণী প্রদাহ) হচ্ছে। এটা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। হতে পারে আপনি গর্ভবতী বা হজমের সমস্যা বা এমন কোন সমস্যা বিষয় যার কারনে আপনার হাসপাতালে যাওয়া জরুরী হয়ে পড়ে।

অ্যাপেন্ডিক্স
যদি আপনার তলপেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা, সাথে বমি ও জ্বর থাকে তাহলে এটি অ্যাপেন্ডিক্স জনিত সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার এমন সমস্যা দেখা দেয়, দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যান। অ্যাপেন্ডিক্সের ইনফেকশনের কারনে অপারেশন করা লাগতে পারে। যদি অ্যাপেন্ডিক্স বার্স্ট হয় তাহলে ইনফেকশন পুরোশরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। এর কারনে জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিরক্তিকর পেটের সমস্যা (Irritable Bowel Syndrome – IBS)
যদি আপনার পেটে ব্যথা, খিঁচুনি, পেট ফুলে যাওয়া, ডায়রিয়া বা কোষ্টকাঠিন্য বার বার হয় তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলে এই সমস্যার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এটা হতে পারে IBS, একে অনেক সময় স্পাস্টিক কোলনও বলা হয়। খাদ্যাভ্যাস বদল, মেডিটেশনের ফলে এক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

পেইনফুল ওভুলুশন
আপনার কি কখনো দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে কনকনে ব্যথা হয়েছে? এটা ওভুলুশন এর লক্ষন। যখন ওভুলুশন হয়, তখন অনেক সময় জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময় এর সাথে কিছু তরল পদার্থ ও রক্ত আসতে পারে। এই অনুভুতিকে জার্মান ভাষায় “মিত্তেলসচমার্জ” বা “মাঝামাঝি ব্যাথা” বলে। কারন এটি দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে হয়। এই ব্যথা একেক সময়ে একেকদিকে হতে পারে। তবে এটি ক্ষতিকর কিছু নয়, কয়েক ঘণ্টা পরে ঠিক হয়ে যায়।

PMS(Post Menuposal Syndrom) ও মাসিকজনিত খিঁচুনি
এই ধরনের ব্যথা সাধারণত তলপেটে বা পিঠের দিকে (কোমরে) হয়। এই ব্যথা ১-৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। কেন হয়? কারন প্রতিমাসে আপনার জরায়ু একটি টিস্যুর আস্তরন তৈরি করে যেখানে একটি ভ্রূণ স্থাপিত হতে ও বৃদ্ধি পেতে পারে। কিন্তু আপনি যদি গর্ভধারণ না করতে পারেন তাহলে পিরিয়ডের সময় এই আস্তরন ফেটে যায় ও বের হয়ে আসে। যখন এটি বের করে দেওয়ার জন্য জরায়ু সংকুচিত হয়, তখন আপনি ব্যাথা অনুভব করেন। এক্ষেত্রে গরম পানির সেঁক দিতে পারেন বা ব্যাথানাশক ওষুধ খেতে পারেন। নিয়মিত অনুশীলন ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। আপনি এ ব্যাপারে আপনার ডাক্তারের সাথেও কথা বলতে পারেন। কিছু কিছু জন্মবিরতিকরণ পিল বা এন্টি ডিপ্রেসান্টস এই সমস্যার ক্ষেত্রে উপকার করতে পারে।

অ্যাক্টোপিক প্রেগন্যান্সি (Ectopic Pregnancy)
যখন কোন ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে কোথাও স্থাপিত হয় ও বড় হতে থাকে তখন এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এটা সাধারনত ফেলপিয়ান টিউবে হয়ে থাকে। এর লক্ষন গুলো হলো তীব্র পেলভিক পেইন বা খিঁচুনি, রক্তপাত, বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা। এমনটা হলে দ্রুত হাসপাতালে যান, এটি একটি জীবনমরন সমস্যা।

যৌনবাহিত রোগ
পেলভিক পেইন যৌনবাহিত রোগের একটি সতর্ক বার্তা হতে পারে। এটি ক্ল্যামিডিয়া ও গনোরিয়া হতে পারে। সবসময় এর লক্ষন দেখা নাও দিতে পারে। তবে প্রস্রাবের সময় ব্যাথা, দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে রক্ত যাওয়া ও অস্বাভাবিক শ্রোণি নির্গমন (Abnormal Vaginal Discharge) হলে দ্রুত ডাক্তার দেখান। তবে অবশ্যই পার্টনারের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে হবে, যাতে একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়াতে না পারে।

শ্রোণি প্রদাহজনিত রোগ (Pelvic Inflammatory Disease)
এটি একটি জটিল যৌনবাহিত রোগ। এটি মহিলাদের ইনফার্টিলিটি জনিত এক নম্বর সমস্যা, যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটা জরায়ু, ওভারি ও ফেলপিয়ান টিউবের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। এর লক্ষন হলো পেট ব্যথা, জ্বর, অস্বাভাবিক শ্রোণি নির্গমন (Abnormal Vaginal Discharge) ও যৌন মিলন বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা। ক্ষতি এড়াতে চাইলে দ্রুত চিকিৎসা করান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। আপনার সাথে সাথে আপনার পারটনারেরও চিকিৎসা করান।

ওভারিয়ান সিস্ট
যখন আপনার ওভুলুশন হয়, জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নির্গত হয়। তবে কোন কোন সময় ফেলপিয়ান টিউবের মুখ খুলে না। ফলে ফেলপিয়ান টিউব ফুলে যায় ও এতে ওভারিয়ান সিস্ট তৈরি হয়। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকর না। তবে এর ফলে শ্রোণি প্রদাহ, চাপ অনুভব করা, ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। এটা যদি ফেটে যায় বা মুচড়ে যায় তাহলে তীব্র ব্যাথা হতে পারে। এমন হলে দ্রুত জরুরী চিকিৎসা সেবা নিন। এটা পেলভিক পরীক্ষা বা আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।

জরায়ুর ফাইব্রয়েডস (Uterine Fibroids)
এগুলো জরায়ুর প্রাচীরে জন্মে। যদিও অনেক সময় এদের ফাইব্রয়েডস টিউমার বলা হয়, কিন্তু এর কারনে ক্যান্সার হয় না। যেসব নারীদের বয়স ৩০ ও ৪০ এর কোঠায়, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুব কমন। এর কারনে সাধারণত কোন সমস্যা হয় না। তবে কোন কোন মহিলাদের ক্ষেত্রে তলপেটে চাপ অনুভব করা, কোমরের নিচের দিকে ব্যথা, পিরিয়ডে বেশি রক্ত যাওয়া, যৌনমিলনে ব্যথা বা গর্ভধারণ করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি এই সমস্যা দেখা দেয়, আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis)
কোন কোন নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ুর মতো একই ধরনের টিস্যুর আস্তরন জরায়ুর বাইরেও দেখা যায়। এটি ওভারি, ফেলপিয়ান টিউব, মুত্রথলি,অন্ত্র বা শরীরের অন্য যেকোনো স্থানে হতে পারে। যখন পিরিয়ডের সময় হয়, এই টিস্যু গুচ্ছ গুলো ভেঙ্গে যায়। কিন্তু এগুলো বের হয়ে যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। এটি খুব কম সময় আসলেই বিপদজনক হয়। তখন এর ফলে ব্যথা অনুভুত হয় ও গর্ভধারণের লক্ষন দেখা দিতে থাকে। এর অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে যেমন – পেইন মেডিটেশন, জন্মবিরতিকরন পিল, পিরিয়ড বন্ধ করার হরমোন, ছোট কোন সার্জারি বা হেটারেকট্মি অর্থাৎ জরায়ু বের করে ফেলা।

মূত্রনালির ইনফেকশন
প্রস্রাবের সময় কি প্রায়ই ব্যথা হয়? অথবা সবসময় কি প্রস্রাবের চাপ অনুভব করেন? এটি হতে পারে মূত্রনালির ইনফেকশন এমনটা হয় যখন আপনার মুত্রনালিতে জীবাণুর সংক্রমন হয়। এটি বেশি খারাপ হয়ে যাওয়ায় আগেই চিকিৎসা করান। যদি এটি কিডনি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে বড় ধরনের কোন সমস্যা হতে পারে। কিডনি ইনফেকশনের লক্ষন গুলো হলো – জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া ও তলপেটের যে কোন একদিকে ব্যথা। কিডনিতে পাথর কিডনির পাথর হলো লবন ও খনিজের দলা, যা শরীর প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এগুলো হতে পারে সরিষার দানার মতো, বালির মতো বা কোন কোন সময় গলফ বলের সমান। এর ফলে প্রস্রাব গোলাপি বা লাল বর্ণ ধারণ করে। যদি আপনার এমন লক্ষন দেখা দেয়, দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা লাগে। প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন।

ইন্টারসটিটিয়াল সিস্টাইটিস (Interstitial Cystitis - IC)
এই সমস্যার কারনে ব্যথা হয় যা মুত্রথলির ব্যথার কারনে হয়ে থাকে। যেসব নারীদের বয়স ৩০ ও ৪০ এর কোঠায়, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুব কমন। সবসময় প্রস্রাবের চাপ, ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রস্রাব করা, প্রস্রাবের ও যৌন মিলনের সময় ব্যথা করা এর লক্ষন।

পেলভিক অরগান প্রলাপস (Pelvic Organ Prolapse)
বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুত্রথলি ও জরায়ু নিচের দিকে নেমে আসে। যদিও এটি তেমন কোন গুরুতর সমস্যা নয়, তবে এর ফলে বেশ অস্বস্তি লাগতে পারে। আপনি শ্রোণি প্রাচীরে চাপ অনুভব করতে পারেন বা আপনার তলপেট সবসময় ভরা মনে হতে পারে। “শংকু(Kegel’s)” অনুশীলনের মতো বিশেষ ধরনের অনুশীলন বা অপারেশন করে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

পেলভিক কনজেসশন সিনড্রোম (Pelvic Congestion Syndrome)
পায়ে বিকল্প বা অতিরিক্ত শিরার ব্যাপারে সবাই জানে, এমন সমস্যা অনেক সময় শ্রোণির ক্ষেত্রেও হতে পারে। রক্ত যখন এই শিরায় ঢুকে পড়ে তখন এটি ফুলে যায় ও ব্যাথা করে। এটিই পেলভিক কনজেসশন সিনড্রোম নামে পরিচিত। এই সমস্যাটি নির্ণয় ও চিকিৎসা করা খুব কঠিন। দাঁড়িয়ে বা বসে যেভাবেই থাকেন না কেন, সবসময় ব্যথা করবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

গুচ্ছ টিস্যু
আপনার যদি কোন সার্জারি বা ইনফেকশন হয়ে থাকে, তাহলে আপনার এই ধরনের ব্যথা যুক্ত সমস্যা হতে পারে। অ্যাডেশন হলো আপনার শরীরে থাকা এক ধরনের গুচ্ছ টিস্যু, যা দুটি অঙ্গের মাঝখানে উৎপন্ন হয় কিন্তু কোন সংযোগ স্থাপন করে না। এর ফলে আপনার পেটে ব্যথা বা অন্য কোন সমস্যা হতে পারে। এর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে যে আপনার সার্জারি করতে হবে নাকি অন্য কোন চিকিৎসা করতে হবে।

ভ্যালভডেনিয়া (Valvodynia)
সাইকেল চালানো বা যৌন মিলনের সময় কি ব্যথা পান? যদি আপনার শ্রোণি মুখ জ্বালা পোড়া করে, হুল ফোটানোর মতো ব্যাথা হয় তাহলে এটি ভ্যালভডেনিয়া হতে পারে। এই ব্যথা সবসময় স্থায়ী হতে পারে, আবার মাঝে মাঝে হতে পারে। আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, এর জন্য কোন থেরাপি বা অন্য কোন চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

ব্যথা যুক্ত যৌন মিলন
এটা বিভিন্ন কারনে হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটি চিকিৎসা যোগ্য। এটা শ্রোণি জনিত ইনফেকশনের কারনে হতে পারে, চিকিৎসা শাস্ত্রে যার নাম ডায়সপারুনিয়া (Dyspareunia). কোন কোন সময় থেরাপির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী শ্রোণি প্রদাহ
যদি আপনার শ্রোণি প্রদাহ ৬ মাসের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে একে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বলে ধরে নিতে হবে। এর ফলে আপনার ঘুম, ক্যারিয়ার, সম্পর্ক প্রভাবিত হতে পারে। তাই, দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যা চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে যায়। যদিও অনেক সময় অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পরেও পেলভিক পেইনের সঠিক কারন জানা যায় না। তবে এক্ষেত্রে আপনার কষ্ট লাঘব করার জন্য আপনার ডাক্তারের সহযোগিতা নিতে পারেন।

এই পাতাটি ৯৬৮৭বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626