বন্ধ্যাত্ব কি বন্ধ্যাতের কারন ও চিকিৎসাঃ ডাঃ সাদিয়া শারমিন সুলতানা
আস সালামু আলাইকুম
আমি ডাঃ সাদিয়া শারমিন সুলতানা
আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গাইনোকলজি এন্ড অবস ডিপার্টমেন্ট এ আছি। আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে ইনফারটিলিটি অর্থাৎ বন্ধ্যাত্ব। পূর্বে বলা হত বন্ধ্যাত্ব একটি অভিশাপ। কিন্তু আস্তে আস্তে এই ধারনা পাল্টে দিচ্ছে, আমাদের মেডিকেল সাইন্স। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের উন্নত টেস্ট রয়েছ, যেগুলোর সাহায্যে আমারা বন্ধ্যাত্বর কারন খুজে তাঁর ট্রিটমেন্ট করছি।
প্রথমেই জেনে নেই বন্ধ্যাত্বটা আসলে কি?
যখন স্বামী স্ত্রী এক সাথে থাকছেন কোন ধরনের জন্মবিরতি করণ পদ্ধতি ছাড়াই এক বছর বা তাঁর বেশি সময় ধরে। কিন্তু তাদের কোন কনসিভ হচ্ছে না, এটাকে আমরা বন্ধ্যাত্ব বলে থাকি।
বন্ধ্যাত্বের অনেক গুলো কারণ আছে। কিছুটা কারন মহিলা কিছুটা পুরুষ আবার দুজনেরও সমস্যা থাকে। তো আজকে সব কারন নিয়ে আলোচনা করব না। এখানে বন্ধ্যাত্ব নির্ধারণের জন্যে অনেক গুলা টেস্ট রয়েছে। ব্লাডের কিছু টেস্টও করা হয়, কিছু হরমনাল টেস্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাফি। কিন্তু বর্তমানে যেটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড ল্যাপারোসস্কপি। এই ল্যাপারোস্কপি নিয়ে আজকে আমরা আমার কিছু আলোচনা থাকবে।
ল্যাপারোস্কপি একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে কোন ধরনের কাটা ছেড়া ছাড়াই, কয়েকটা ছিদ্রের মাধ্যমে মহিলা জনন অঙ্গ টাকে ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখতে পারি বন্ধ্যাত্ব এর আসলে কি কারন রয়েছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চিকিতসাও করে থাকি। ল্যাপারোস্কপির বড় একটা রোল বলতে গেলে, আমি ভাইটাল কিছু কথা গুলো বলব।
প্রথমেই আসছে টিউবাল ফ্যাক্টারঃ টিউবাল ফ্যাক্টর বলতে বুঝাচ্ছে মেয়েদের যে ডিম্বনালি রয়েছে এটার কিছু সমস্যার জন্য বন্ধ্যত্ব এর কারন রয়েছে। কিছু সমস্যার জন্যে টিউবটা ব্লক হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে এখানে যদি কোন ইনফেকশন হয়ে থাকে। কোন ধরনের টিউমারের কারনে এটা ব্লক হতে পারে। এছাড়া আগে যদি কোন অপারেশন করা হয়ে থাকে তাঁর কারনেও এটা ব্লক হয়ে যেতে পারে।
এখন এখানে তাহলে ল্যাপারোস্কপির কাজ টা কি?
আমরা মুলত ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে দেখে থাকি আসলে টিউব টা খোলা আছে কি না। এটার মাধ্যমে আমরা একটা ডাই(রং) টেস্ট করি। আমরা দেখি যদি ডাই টা টিউবের ভিতর দিয়ে পাস করে কি না। যদি ডাই টা টিউবের ভিতর দিয়ে পাস করে। তাহলে বুঝা গেল টিউব টা ভালো আছে। কোন কারনে যদি দেখা যায় যে টিউবে কোন ধরনের সমস্যা আছে। তাহলে একই ভাবে একই সেটিং এ ল্যাপারোস্কপিক ট্রিটমেন্ট করা যায়। যাকে বলা হয় টিউবাল ক্যনোলাইজেশন। এর সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপারোস্কপি ট্রিটমেন্ট এর পাশাপাশি হিস্ট্রোস্কোপিক ম্যাথড টাও ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে টিউবের যে ব্লক ছিলো সেটা কে খুলে দেয়া হয়।
এখন দ্বিতীয় যে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যেটা সমগ্র পৃথিবী ব্যাপি মুলত ছড়িয়ে পড়েছে। সেটা হল চকলেট সিস্ট। এটা এখন একটা কমন রোগ যেটা যা বর্তমানে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ১ জনের হয়ে থাকে। এখানে মাসিকের সময়ে তীব্র ব্যাথা সহ আরও অনেক সমস্যা দেখা যায়। এই ধরনের সমস্যার জন্যে রোগ নির্ণয় ও অপারেশনের জন্যে অন্যতম কার্যকরী ম্যাধ্যম হলো ল্যাপারোস্কপি। ল্যাপারোস্কপির ম্যধ্যমে যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোগ যেমন দেখা যায় এবং সাথে সাথে ট্রিটমেন্ট ও করা যায়।
তৃতীয় আরেকটি বিষয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এটার চিকিৎসায় ও আমরা ল্যাপারোস্কপিক টেকনিকে ওভারিয়ান ড্রিলিং নামক একটা ট্রিটমেন্ট করে থাকি। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে বন্ধ্যাত্বের দূরীকরনে যে সমস্ত ব্যবস্থাপনা দেয়া হয় তা ভালো ভাবে কাজ করে।
আজকে এই পর্যন্তই। বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আর নিরাশায় ভুগবেন না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে ভাল থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।