রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

উদ্বোধনের পরে এক বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী শিশু হাসপাতাল

২০-০৪-২০২৪

উদ্বোধনের পরে এক বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী শিশু হাসপাতাল

রাজশাহী শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় আগে। গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে এখনো হাসপাতালটি বুঝে নেয়া হয়নি। কাজ শেষে হাসপাতালটি উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি। কিন্তু এক বছর চার মাস পার হলেও চালু হয়নি হাসপাতালটির কার্যক্রম। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতাল চালু করতে হলে জনবল এবং মেডিকেল সামগ্রীও দরকার। সেটি এখনো পাওয়া যায়নি। এজন্য হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না।

গণপূর্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতালটি কোন দপ্তরের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে, সে নির্দেশনা পাচ্ছেন না তারা। ফলে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটি পড়ে আছে দিনের পর দিন। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালটি খালি পড়ে থাকলেও অন্তত ২০ জেলার শিশু রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। এখানে তিনটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে শিশুদের। এক শয্যাতেই রাখা হচ্ছে তিন-চারটি শিশুকে। তার পরও নতুন হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নবনির্মিত হাসপাতালের জায়গায় আগে সরকারি কোয়ার্টার ছিল। সেগুলো ভেঙে পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী হাসপাতাল নির্মাণ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৫ সালের মে মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শুরুতেই নকশা নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। প্রথমে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা নেমে আসে চার তলায়। ১০ তলা ভবনটি করার পরিকল্পনা ছিল ১৬ হাজার বর্গফুটের। এটি পরিবর্তন করে ২৭ হাজার বর্গফুট করা হয়। এ নকশা সংশোধনের পর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুনে। পরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাতেও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এরপর আবার ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ে। ওই মেয়াদ পার হওয়ার পর বছরখানেক আগে কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম মেয়াদে কাজের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকা। কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ায় ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকায়।

হাসপাতালের প্রথম তলার আয়তন ১৯ হাজার বর্গফুট। এখানে রয়েছে ১৪ শয্যার জেনারেল অবজারভেশন ইউনিট। এক্স-রে করানোর জন্য দুটি এবং সিটি স্ক্যান ও এমআরআইয়ের জন্য একটি করে কক্ষ রাখা হয়েছে। স্টোর হিসেবে রয়েছে আটটি কক্ষ। নিচতলায় একসঙ্গে ২০টি গাড়ি পার্কিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। ২০ হাজার ২২৫ বর্গফুটের দ্বিতীয় তলা রয়েছে একটি মাইনর ওটি ও চারটি বিশেষায়িত অপারেশন থিয়েটার। এছাড়া ১০ শয্যার প্রি ও পোস্ট অপারেশন থিয়েটার এবং ৫৬ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ইউনিট করা হয়েছে। চতুর্থ তলায় রয়েছে শিশুদের ৯৬ শয্যার সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৮ শয্যার পেয়িং শয্যা। হাসপাতালে রোগী ভর্তি রাখার পাশাপাশি বহির্বিভাগে চিকিৎসাও দেয়া হবে। তৃতীয় তলায় চিকিৎসকের জন্য করা হয়েছে ১৮টি কক্ষ। হাসপাতালে থাকবে ক্যান্টিন, ল্যাব এবং অফিস ব্লক।

গণপূর্তের তথ্যানুযায়ী, হাসপাতাল ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। জেনারেটর কেনা ও সাবস্টেশন নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। বৈদ্যুতিক পাখা, এসি, সোলার প্যানেল এবং অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী বসানো হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকায়। প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে সাবস্টেশন এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণ করতে। দুটি লিফট কিনতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। পুরো হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন বসাতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। সবকিছুই প্রস্তুত। এখন শুধু হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীরের গ্রিল লাগানোর কাজ বাকি। চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ঠিকাদার গ্রিল লাগাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।

হাসপাতাল নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘নির্মাণকাজ এক বছর আগে শেষ হয়েছে। প্রথম দফার করা রঙ উঠে যাওয়ায় এক মাস আগে আবারও রঙ করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কেউ বুঝে নিচ্ছে না। রামেক হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয় নাকি বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর—কে হাসপাতালটি বুঝে নেবে, আমরা তাও জানি না। অন্য কাজে দেখি সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা কর্মকর্তারা আমাদের দ্রুত কাজ শেষ করতে তাগিদ দেন। এখানে কাজ শেষ করে বসে আছি কিন্তু কারো কোনো খোঁজ নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের অনেকবার বলেছি, ভবন বুঝে নিতে, কিন্তু তারাও নিচ্ছেন না। কেন নিচ্ছেন না, সেটি বলতে পারব না।’
সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মো. ফারুক হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণ শেষ হলে তো আমাদের চিঠি দিয়ে গণপূর্ত জানাবে। কিন্তু এখনো জানায়নি।’
চিঠি না দেয়ার বিষয়ে গণপূর্তের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্মাণকাজ চলমান প্রক্রিয়া। হস্তান্তরের আগের দিন পর্যন্ত এটি আমাদের তত্ত্বাবধানে থাকে এবং টুকটাক কাজের প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য চিঠি দেয়নি। কাজ যে শেষ হয়েছে সেটা স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সবাইকেই মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।’

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, ‘হাসপাতালের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানি। এখন চালু করতে হলে জনবল প্রয়োজন। অন্যান্য মেডিকেল সামগ্রীও দরকার। বিষয়টি একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি। তাই আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না।’
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘জনবল না হয় আমরা দেব, কিন্তু মেডিকেল সামগ্রী দিতে হবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে। এজন্য কিছু প্রক্রিয়ার ব্যাপার আছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।’

তথ্যঃ বণিক বার্তা

এই পাতাটি ১৬৪বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626