শীতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা
ঘাম হওয়া খারাপ কিছু নয়। ঘাম বের হওয়ার সময় শরীর থেকে কিছু তাপ দূর করে। আবার এই ঘাম যখন শুকাতে থাকে তখনো শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। অনেক বাবা-মা বলে থাকেন, তাঁদের শিশু মাত্রাতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক রকমের ঘামে। এমনকি শীতের দিনেও বাচ্চারা অনেক ঘামে। সব সময় এই ঘামকে কোনো রোগবালাই ভাবা ঠিক নয়। জ্বর ছাড়া কোনো শিশুর বেশি ঘাম হলে তা নিয়েও দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
অনেক শিশুর মাথা ঘামে বেশি, এর কারণও অজানা। কিন্তু রিকেটস্ (ভিটামিন ডি-এর অভাবজনিত অসুখ) ও জন্মগত হৃদ্যন্ত্রের ত্রুটির শিশুতে এটা সুনির্দিষ্ট লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত। হাতের পাতা ঘেমে জবজবে হওয়া স্বাভাবিক শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের এমনিতেই হতে পারে। থাইরোটক্সিকোসিস (থাইরয়েড হরমোনের আধিক্যজনিত অসুখে) শিশু বেশি ঘামে। এ ছাড়া কিছু রোগ, যেমন রিলেই সিনড্রোম, ফেয়েক্রোমোসাইটোমাতে শিশু ঘামে বেশি। তবে এতে অন্যান্য লক্ষণও থাকে।
শিশু অতিরিক্ত ঘামলে ভেজা কাপড়ে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই ঘামে ভেজা কাপড়চোপড় বারবার পাল্টে দিন। অনেক সময় হালকা শীতেও শিশুরা যখন ঘামছে, তখন বেশি কাপড়চোপড়ে বা গরম কাপড়ে জড়িয়ে রাখার দরকার নেই। খোলা আলো বাতাস লাগতে দিন। অনেক সময় ঘাম থেকে ত্বকে র্যা শ হতে পারে। তার চিকিৎসা নিন।
শীতে শিশুদের কেবল গরম কাপড়ে জড়িয়ে দিলেই হয়ে গেল এমন ভাবনা বদলাতে হবে। উপমহাদেশে শীতকালে দিনের বিভিন্ন সময় তাপমাত্রা ওঠানামা করে, তাই শিশুকে পোশাক পরাতে হবে বুঝেশুনে, খেয়াল রাখতে হবে প্রতিনিয়ত।
শিশুর শীতপোশাকের বিষয়ে কয়েকটি সতর্কতা সম্পর্কে জেনে রাখি: কখন পরাচ্ছেন ভাবুন:
বাচ্চারা নিজেদের ঠান্ডা বা গরম লাগার কথা সেভাবে বলতে পারে না। তাই তাদের জন্য কখন কী দরকার সেটা অভিভাবকদেরই বুঝে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সদ্যোজাত বাচ্চাদের মা-বাবাদের জন্য কাজটা আরও একটু জটিল। কারণ বাচ্চার কথা বলার মতো ক্ষমতা এখনও হয়ে ওঠেনি। তাই মা বাবাকেই বুঝে নিতে হবে বাচ্চাকে কতটুকু গরম পোশাক পরানো উচিত।
সদ্যোজাত শিশুর খেয়াল রাখুন:
শিশু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সদ্যোজাত শিশুর মাথা শক্ত হতে সময় লাগে। এদিকে মাথার ত্বক পাতলা হওয়ায় সহজেই তাদের মাথা থেকে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রথমেই শিশুটির কোমল মাথা টুপি বা কাপড়ে ঢেকে দিন। সেই সঙ্গে কাপড়ে বা কাঁথায় তাদের জড়িয়ে করে রাখুন। এতেই ওম পাবে ছোট্ট সোনা। হাত ও পা ঠান্ডা হচ্ছে কিনা খেয়াল রেখে হাত-মোজা ও পা-মোজা পরাতে ভুলবেন না।
শীতের একাধিক পোশাক:
চিকিৎসকদের পরামর্শ মতে, ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে একটা বেশ মোটা সোয়েটার বা গরম জামা পরানোর বদলে বাচ্চাদের কয়েকটি জামা পরালে শরীর বেশি গরম থাকে। তাপমাত্রা ওঠানামা অনুযায়ী কাপড় কম-বেশি করা যায়। যেমন: এই সময়ের হালকা শীতে কোলের শিশু থেকে শুরু করে নার্সারিতে পড়া বাচ্চার ক্ষেত্রেও সোয়েটারের বদলে দুটি বা তিনটি সুতির জামা একসঙ্গে পরানো যায়, এর ফলে শরীর বেশি গরম থাকবে। আবার গরম লাগলে একটি-দুটি জামা খুলেও ফেলা যাবে।
বুক ঘেমে যেন ঠাণ্ডা না লাগে:
শীত পড়ার আগে শিশুকে সাবধানতাবশত গরম জামা পরাতে হবে ঠিকই, কিন্তু তাতে শিশুর শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। একগাদা কাপড় বা ভারী সোয়েটার পরালে ঠান্ডার বদলে গরম লাগবে শিশুর, এমনিতেই ওদের শরীরের তাপ বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে বুক-পিঠ ঘেমে যায়। ঘাম বসে ঠান্ডাও লাগতে পারে। তাই সময় বুঝে শিশুর গরম পোশাক বাড়াতে বা কমাতে হবে অভিভাবকদের। তাছাড়া ছোট্ট সোনারা ঠান্ডা লেগে কষ্ট ভোগ করবে।
সোয়েটারের অ্যালার্জি থেকে সাবধান:
অনেক সময় শীতের পোশাক থেকে শিশুদের অ্যালার্জি হয়। বিশেষত শিশুর স্পর্শকাতর ত্বকে অনেক সময়ই অস্বস্তি বাড়ে। এমনকী সদ্যোজাত শিশুদের গরমের পোশাক থেকে স্কিন অ্যালার্জিও হয়। তাই তো শিশুদের শীতের পোশাক বা সোয়েটার পরানোর আগে অবশ্যই সুতির পোশাক পরিয়ে দেওয়া উচিত। সুতির পোশাক পরানোরপরে গরম পোশাক পরান।
যেসব বাচ্চাদের অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য শীতের বিশেষ সতর্কতায় এই ছিল আমাদের আলোচনা।