মহান স্বাধীনতা মাস উপলক্ষে একদিন ব্যাপি নাক কান গলা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হল
আমাদের দেশে নাক-কান-গলার সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠান্ডার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা দেয়। কিন্তু ঠান্ডাজনিত সমস্যা ছাড়াও নাক-কান-গলার আরও অনেক জটিল অসুখ হতে পারে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। গলার সমস্যার মধ্যে আছে টনসিল, যেটি ছোট বাচ্চাদের অনেক বেশি হয়। শিশু আর বৃদ্ধদের গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। নারীদের ফ্যারিঞ্জাইটিস নামের গলার সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। এগুলো খুবই সাধারণ কিছু গলার অসুখ। এ ছাড়া অনেক সময় হঠাৎ করে গলায় ব্যথা হয়, খাবার গিলতে সমস্যা হয়। এগুলো গলার কোনো ইনফেকশন বা গলা বা খাদ্যনালিতে টিউমারের লক্ষণ। কানের সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে কান পাকা, কানে কম শোনা বা আঘাতজনিত সমস্যা। আর নাকের সাধারণ সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে নাকের হাড় বাঁকা, নাকের ভেতর মাংস বৃদ্ধি, সাইনাস প্রভৃতি। এ ছাড়া নাকে ক্যানসার ও টিউমারের মতো সমস্যাও হয়ে থাকে। আমাদের দেশে দেখা যায়, নাক, কান বা গলার কোনো সমস্যা হলে রোগীরা ইএনটি স্পেশালিস্টদের কাছে না গিয়ে মেডিসিন বা নিউরোমেডিসিন স্পেশালিস্টদের কাছে আগে যান। এর প্রধান একটি কারণ হচ্ছে নাক বা কানের সমস্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথাব্যথা হয়। এভাবে অন্য চিকিৎসকের কাছে গেলে রোগীর ঠিকমতো ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা হয় না। তাই এসবের কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই নাক-কান-গলা রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
নাকের হাড় বাঁকা সমস্যা হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মাথাব্যথা হয়। হাড় যদি অনেক বেশি বাঁকা থাকে, তাহলে সার্জারি করে সেটি সোজা করা যায়। তবে তার আগে পিএনএস সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে নাকে হাড়ের অবস্থা দেখে নিতে হবে। সঠিকভাবে সার্জারি করলে নাকের হাড় পুনরায় বাঁকা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে সেটি দ্রুত করতে হবে।
সাধারণ মানুষ তো বটেই, এ দেশে অনেক চিকিৎসকের মধ্যেও নাকের পলিপ নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন, নাকের ভেতর মাংস বৃদ্ধি মানে পলিপ। এটি ঠিক নয়। নাকের পলিপ সাধারণত দুই রকমের। ইথমোডাইল ও এন্ট্রোকোঅ্যানাল। এ দুই ধরনের পলিপ এন্ডোস্কপি সাইনাস সার্জারি করে সহজেই অপসারণ করা যায়। সাইনাস সমস্যায়ও একই চিকিৎসা অর্থাৎ এন্ডোস্কপি সাইনাস সার্জারি করা হয়।ঠান্ডা-কাশির সমস্যায় আক্রান্ত হননি এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এসব বেশ সাধারণ সমস্যা ছাড়াও নাক, কান ও গলা সংক্রান্ত নানা রকম গুরুতর সমস্যার সমাধানের বিষয়টি দেখভাল করেন একজন নাক, কান ও গলা ডাক্তার বা ইএনটি বিশেষজ্ঞ।নাক, কান ও গলার সাধারণ সমস্যা সনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী প্রতিকার হিসেবে ওষুধ পরামর্শ দেওয়া।টনসিলের সমস্যা সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনে টনসিল অপসারণের সার্জারি বা অপারেশন সম্পন্ন করা।গলার অভ্যন্তরীণ সমস্যার ক্ষেত্রে সার্জারি ও অপারেশন করতে হয়।
কানে কম শোনা, কানের ভারসাম্যহীনতা জনিত সমস্যা এবং জন্মগত কানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যা নির্ণয় করা এবং এর প্রতিকারের পরামর্শ দেওয়া। নাক ডাকা, নাকের পলিপস ও নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ।মাইগ্রেনের সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন এবং এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে তার সমাধান দেন একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ। স্বরযন্ত্রের সমস্যা নির্ণয় করা এবং এর প্রতিকার দেওয়া।
ই-হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা, অপসারণের সার্জারি বা অপারেশন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সঠিক ও কার্যকর ভাবে করার জন্য বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত, যার ফলে ই-হাসপাতালে রোগীরা খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে ওঠেন ।শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কান। কানে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। আমাদের দেশে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ কানের রোগ হলে অবহেলা করে। ডাক্তার দেখানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। কিন্তু সামান্য অবহেলা ডেকে আনতে পারে বিপদ। এমনকী চিরতরে শ্রবন শক্তি হারানোর সম্ভাবনাও থেকে যায়।
নাক, কান ও গলায় অনেকগুলো সমস্যা হয়ে থাকে। যেসব অসুখ নিয়ে রোগীরা আমাদের কাছে নিয়মিত আসেন সেগুলো হলো গলা ব্যাথা, গলার স্বর বসে যাওয়া, নাকের সাইনোসাইটিস জাতীয় সমস্যা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যাথা, ঠাণ্ডার কারণে কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঢোক গেলার কষ্ট- এমন অসুখ আমরা বেশী পেয়ে থাকি। এছাড়া গলা ফোলার রোগীও আমরা ( ডাক্তার) পেয়ে থাকি। এতোক্ষণ যেসব উপসর্গের কথা বললাম এমন রোগী আমরা বেশী পাই শীতকালীন সময়ে বা শীতের আগে পরে। অর্থাৎ আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা ভাব থাকলে এসব সমস্যা দেখা দেয়।
এছাড়া অন্যান্য রোগীও আমরা পাই যারা সাধারণত যেকোন ঋতুতেই আসতে পারে। যেমন খাওয়ার সময় গলায় মাছের কাটা আটকে যাওয়া, বাচ্চারা খেলাধূলা করতে গিয়ে খেলনার কোন অংশ- যেমন কলমের খাপ নাকে বা কানে ঢুকে যাওয়া এমন রোগী পেয়ে থাকি। গলার যেসব রোগী আমরা পাই তার মধ্য বাচ্চার সংখ্যা বেশী। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকে বা অ্যালার্জী জনিত সমস্যায় ভোগে তারাও ধরনের সমস্যাগুলো নিয়ে আসে।
আমাদের নাক কান গলা বিভাগে যেসব রোগী আসে তাদের মধ্যে অন্যতম গলার টনসিলাইটিস। এ সমস্যায় রোগী খেতে পারে না, গলার ব্যথা বাড়তে থাকে। গায়ে জ্বর থাকে। আমাদের দেশে অনেক রোগী এমন সমস্যা অবহেলা করে থাকে। কেউ কেউ ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনে খায়। আমি বলব এগুলো কোন ভাবেই অবহেলা করা উচিৎ নয়। সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ। বিশেষজ্ঞরা প্রথমে রোগের কারণ নির্ধারণ করেন। এরপর রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। যদি ইনফেকশানজনিত কারণে হয় বা টনসিলাইটিস হয় সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্দিষ্ট মেয়াদে এন্টিবায়োটিক চালাতে বলি।
নাক, কান, গলার সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত কিছু নিয়ম মানতে বলি। যেমন: ঠাণ্ডা খাবার, আইসক্রীম, কোমল পানীয় না খাওয়া, কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা, গর্গল করা সহ কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলি। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। অনেক সময় সামান্য অবহেলা বড় বিপদ ডেকে আনেন।
নাক কান গলার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আজকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাধীনতা মাস উপলক্ষে নাক কান গলা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় । যেখানে রোগী দেখেন ডাঃ মোঃ হারুন-উর-রশিদ। ক্যাম্পে ফি ছিল মাত্র ২৫০ টাকা এবং সকল পরীক্ষার জন্য ৩৫% ছাড় ছিল। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু অপারেশনেও ছাড় চলছে যেটা আগামী এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত চলবে।