রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

শিশুদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে এন্টিবায়োটিক আর নয়

১১-০৯-২০২০

শিশুদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে এন্টিবায়োটিক আর নয়

মেসেজ ১:
" আপু, আমার বাচ্চার গতকাল রাত থেকে জ্বর।গা মুছে দিচ্ছি, নাপা খাওয়াচ্ছি কিন্তু জ্বর কিছুতেই ১০১ এর নিচে নামছে না! "
আমি উত্তর দিলাম, " এটা সিজনাল ভাইরাল ফিভার। টানা তিনদিন এরকম থাকবে, ৫-৭ দিনে কমবে। বেশী করে পানি, তরল খাওয়ান পেশাব যেন না কমে আর গা মুছে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন, নাপা চলবে! "
" আপু, সেফ থ্রি শুরু করেছি আজ দুপুরে, ওটা কি চালাবো? "
" এটা কে দিলো ১ দিনের জ্বরে? " আমি হতবাক।
" জ্বর দেখে বাচ্চার বাবা ভয় পেয়ে এনে খাওয়াইছে, আমি না করেছিলাম। "
"............ " কবি নীরব।

এখানে আমার প্রশ্নঃ
১. জ্বর কি কোন অসুখ নাকি অসুখের লক্ষণ ?
২. ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক কি কাজ করবে?
৩. অযথা এন্টিবায়োটিক দেয়ায় এই ঔষধ কি আর পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে কাজ করবে?

উত্তরঃ জ্বর যে কোন রোগের একটা লক্ষণ। যদি ইনফেকশন বা ঘা হতো তাহলে ব্যাকটেরিয়া মনে করে আমরা সাথে সাথে এন্টিবায়োটিক দিতাম। ভাইরাস কোন এন্টিবায়োটিকে মরে না। এটা সেলফ লিমিটিং, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কাজেই, এখানে এন্টিবায়োটিক বরং উল্টো শরীরে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া মেরে শরীরকে বিপদে ফেলতে পারে। বার বার এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে পরবর্তীতে একে চিনে নিয়ে ব্যাকটেরিয়া নিজেদের চরিত্র পাল্টে অন্যকোন নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ায় পরিনত হয় যেন ঐ ঔষধ পরের বার কাজ না করে।

মেসেজ ২:
" ম্যাম, আমার বাচ্চার বয়স ৬ মাস। বাড়তি খাবার খিচুড়ি খেতে চায় না তাই চাররকম ডাল আর গম গুড়ো করে এরসাথে বাদাম, খেজুর, মিছরি মিশিয়ে খাওয়াচ্ছিলাম। হঠা করে দুপুর থেকে আম আম পায়খানা করায় এমোডিস শুরু করেছি। ঠিক আছে কি? আর কোন ঔষধ দিবো? "
" এন্টিবায়োটিক কেন শুরু করলেন ? " আমি হতাশ।
" এমোডিস এন্টিবায়োটিক? আমি ভেবেছি আমাশয়ের ঔষধ। বাচ্চা বমি করছে , খেতেও চায় না। "
"............. " আমার বলার কিছু ছিল না।

প্রশ্নঃ
১.উল্টো পাল্টা খাবারে সমস্যা হয়ে ডায়রিয়া হলে এন্টিবায়োটিক কি করবে?
২. পায়খানায় আম যাওয়া স্বাভাবিক, এরমানেই কি আমাশয়?
৩.৬ মাসের বাচ্চার কি কৃমি হতে পারে যে বড়দের মেট্রোনিডাজল ছোটদের দিতে হবে?
৪. বদহজম কি রোগ যে ঔষধ দিতেই হবে?

উত্তরঃ
ছয় মাসের একটা বাচ্চার খাদ্যনালী লিভার কিডনি অপরিনত থাকে এবং বুকের দুধের কাছাকাছি কোন খাবার না দিলে বাচ্চা খেতে পারেনা, পেটে সহ্যও হয় না। কাজেই চাল, ডাল তেল দিয়ে রান্না খিচুড়িই এসময়ে খাওয়ার জন্য আদর্শ খাবার। চিনি, লবনও দেয়া যাবে না। সুজি, চালের গুড়া সাবু পেটে গেলে ফুলে যায় ও হজম হতে সময় নেয়। এজন্য বাচ্চার খিদে কম লাগে, খেতে চায় কম, গ্যাস হয়ে পেট ফাপে। ফলে কারো কষা পায়খানা হয় কারো পাতলা। এছাড়া, পায়খানা কষা হলে আঁটকে যায় বা হতে কষ্ট হয়, এজন্য পিচ্ছিল থাকার জন্য পায়খানায় আম বা মিউকাস থাকতেই পারে যা শরীর খাবার থেকে তৈরি করে। এটাকে আমাশয় বলা ঠিক না।
মেট্রোনিডাজল প্রধানত বড়দের ঔষধ বিভিন্ন দাঁতের ইনফেকশন, পেলভিক অর্গানে ঘা, কৃমি এসব সমস্যায় দেয়া হয় যা ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য তেমন প্রযোজ্য নয়।
খাবারে সমস্যা তাই উল্টো পাল্টা খাবার বন্ধ করে সঠিক খাবার খাওয়ালেই পেটের সমস্যা ভালো হয়ে যাবে৷ এখানে এন্টিবায়োটিকের কোন কাজ নেই।
উল্টো এন্টিবায়োটিক খাওয়ালে বাচ্চার শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যায় এবং খাদ্যনালি আরো নাজুক হয়ে ডায়রিয়া বাড়িয়ে দেয়।

এন্টিবায়োটিক কেন খাওয়াবো না?
১. শরীরের ছোটখাটো অধিকাংশ রোগ ভাইরাস দিয়ে হয় এবং এগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। তাই এসব ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক কোন কাজে লাগে না।
২.অপ্রয়োজনে ও অনিয়মিত এন্টিবায়োটিক খেলে শরীরের ব্যাকটেরিয়া ঐ ঔষধের কার্যকারিতা জেনে ফেলে এবং যে অনুযায়ী নিজেদেরকে পাল্টে ফেলে যাতে পরবর্তীতে ঐ ঔষধ কাজে না লাগে।
৩. এন্টিবায়োটিক শুধু ব্যাকটেরিয়াই মারে না! এরসাথে শরীরের কিছু দরকারী কোষ,রোগ প্রতিরোধ কারি শ্বেত কনিকারাও ধ্বংস হয়। ফলে শরীর খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারে সুযোগসন্ধানী জীবাণূদের দ্বারা।
৪. ছোটখাটো ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে এবং এদের এন্টিবায়োটিক দিয়ে না মারলে, শরীর এদের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করার সময় পায় যা পরবর্তীতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোগায়।
৫.এন্টিবায়োটিকের নিজেদেরই অনেক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বাচ্চাকে আরো দূর্বল অপুষ্ট ও রোগাক্রান্ত করতে পারে।

কাজেই,

অযথা, যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক নয়,
রয়ে যায় এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের ভয়।


ডাঃ লুনা পারভীন
শিশু বিশেষজ্ঞ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
শ্যামলি।
(সংগৃহিত ও সংকলিত)

এই পাতাটি ৪৬৮বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626