রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

শীতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত বাচ্চার জন্য বাড়তি যত্ন

০৭-১২-২০২৩

শীতে নিউমোনিয়া আক্রান্ত বাচ্চার জন্য বাড়তি যত্ন

দেখতে দেখতেই চলে এসেছে শীত। আর এই শীতের সময় এলেই আমরা চারিদিকে বড়দের এবং ছোটদের কম-বেশি নানা রকম রোগ দেখতে পাই। বিশেষ করে শিশুদের অসুখ-বিসুখ একটু বেশি হতে দেখা যায়। এরকম প্রতিবারই শীতের সময়ে শোনা যায় এবং আমরা আশেপাশে দেখতেও পাই যে বাচ্চারা অনেকেই নিউমোনিয়া তে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরছে। আমাদের ছোট সন্তানেরা যেন এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে, এবং আক্রান্ত বাচ্চাদের বাড়তি যত্নের জন্য যা করতে হবে, তার জন্য কিছু বিষয়ে আমাদের জানা উচিৎ। এরকম কিছু বিষয় নিয়ে আজকে আমাদের আলোচনা।

নিউমোনিয়া কী?
সহজ কথায় ফুসফুসে জীবাণু আক্রমণের ডাক্তারি ভাষায় যে নাম সেটি হলো নিউমোনিয়া। খুব কম ব্যক্তিই রয়েছেন যার জীবনে অন্তত একবারও নিউমোনিয়া হয়নি। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ হাজার শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ার কারণে।

কোন ধরনের শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
 যে সকল বাচ্চারা চরম অপুষ্টির শিকার,
 যে সকল বাচ্চা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত যারা, যেমন–হাম, হুপিং কাশি,
 যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,
 যে সকল বাচ্চা জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত,
 যারা সদ্যজাত শিশু,
 যে সকল বাচ্চার আশেপাশে বায়ু দূষণ, অতিরিক্ত ভিড় পরিবেশ রয়েছে।

কীভাবে নিউমোনিয়া হয়?
যখন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু আমাদের শ্বসনতন্ত্রে প্রবেশ করার পরে ফুসফুসের অ্যালভিওলাইতে (ফুসফুসের যে অংশ বেলুনের মতো প্রসারিত হয়ে ফুসফুসে বাতাস প্রবেশ করায়) পৌঁছায় এবং প্রদাহের (জীবাণু আক্রমণের ফলে জীবদেহে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়া) সৃষ্টি করে। এই জীবাণুর আক্রমনের কারণে শিশুর ফুসফুসের কোষগুচ্ছ তার নমনীয়তা হারিয়ে শক্ত হয়ে যায়। অল্প কিছু অংশ থেকে শুরু করে ফুসফুসের বিশাল একটা অংশে এই ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। এতে করে গ্যাসের আদান-প্রদানের জন্য ফুসফুসের ভিতরে জায়গা কমে যায় এবং শিশু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায়না জন্য শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলো জানলে আমরা সহজেই নির্ণয় করতে পারব শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে কি না।
নিউমোনিয়ার সাধারণ উপসর্গ:
 জ্বর (মাঝারি থেকে তীব্র),
 কাশি,
 শ্বাসকষ্ট, (শ্বাসকষ্ট বেশি হলে শিশু খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া,)

শারীরিক উপসর্গ:
 বাচ্চা খুবই বিরক্ত হয়ে থাকবে,
 শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে,
 নাকের ছিদ্র বড়ো বড়ো করে শ্বাস নেবে,
 শরীরে অক্সিজেন খুব বেশি কমে গেলে মাথা ঝাঁকাতে থাকবে,
 তীব্র অবস্থায় ঘড়ঘড় আওয়াজ করতে থাকবে,
 অক্সিজেনের অভাবে শরীর নীল হয়ে যেতে পারে।

বুকের উপসর্গ:
 ঘনঘন শ্বাস নেওয়া; এটি বাচ্চার বয়স ভেদে ভিন্নতা আছে–
০-২ মাস: মিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাস,
২-১২ মাস: মিনিটে ৫০ বারের বেশি শ্বাস,
১-৫ বছর: মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস,
 বুক ভিতরের দিকে চেপে যাবে
 হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাবে,
 এছাড়া স্টেথোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করলে আরও লক্ষণ পাওয়া যাবে।

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই বুঝতে হবে যে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এটাকে শুধু ঠান্ডা মনে করে অবহেলা করার সুযোগ নেই।
সারা বিশ্বে ৫ মাসের কম বয়সি ১৬ ভাগ শিশু মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ার কারণে। অর্থাৎ পৃথিবীতে প্রায় প্রতি ৩৫ সেকেন্ডে একটি শিশু নিউমোনিয়াতে মারা যায়। তবে, সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই মৃত্যুগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।

নিউমোনিয়া মোকাবেলায় জেনে নিতে হবে এটি কীভাবে ছড়ায়:
 বাচ্চাদের নাকে যেসব জীবাণু থাকে সেগুলোও ফুসফুসে নেমে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করতে পারে,
 আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি থেকে বের হওয়া শ্লেষ্মা থেকে,
 জন্মের পরপর রক্ত থেকেও ছড়াতে পারে।

নিউমোনিয়া থেকে শিশুকে রক্ষা করার সবথেকে কার্যকরী উপায় হলো শিশুকে নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া। বাংলাদশে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির আওতায় শিশুদেরকে নিউমোনিয়ার টিকা প্রদান করা হয়। এর বাইরে নিউমোভ্যাক্স-২৩ নামের একটি ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি যেসব শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদেরকে প্রতি বছরই ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার ভালো উপায়। এগুলোর সাথে সাথে শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা, বুকের দুধ পান করানো এবং প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
অভিভাবকদেরকে অবশ্যই শিশুকে পরিচ্ছন্ন থাকার উপায়গুলো শেখাতে হবে এবং নিজেদেরকেও তা পালন করতে হবে। ছোটো থেকেই শিশুকে শেখাতে হবে যে হাঁচি এলে টিস্যু বা জামার হাতা দিয়ে নাক আড়াল করে ধরে হাঁচি দিতে হবে, ব্যবহার শেষে টিস্যুটাকে ফেলে দিতে হবে এবং নিয়মিত হাত ধুতে হবে।
বড়োদেরকেও যেকোনো ছোটো শিশুকে ধরার আগেই ভালোমতো হাত ধুতে হবে।
শিশুরা যেসব জিনিস বেশি ধরে যেমন খেলনা, টেবিল ইত্যাদি সাবান এবং পানি দিয়ে নিয়মিত মুছে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এর পাশাপাশি বাসায় যেন কেউ ধূমপান না করে এবং কোনো কিছু থেকে বেশি ধোঁয়া উৎপন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।

প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগও কিন্তু সহজেই প্রতিরোধযোগ্য। এমন একটি রোগ থেকে বাঁচতে, পর্যাপ্ত সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। বাচ্চাদের জন্য বাড়তি যত্ন বলতে এখানে এটাই যেন উপরে আলোচিত কারণে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে না পরে সেদিকে কড়া নজরদারি রাখা।

এই পাতাটি ১৮৭বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626