রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

মানবদেহে ট্রান্স ফ্যাটঃ উৎপত্তি, প্রভাব ও প্রতিকার

১৪-০৯-২০২০

মানবদেহে ট্রান্স ফ্যাটঃ উৎপত্তি, প্রভাব ও প্রতিকার

বাংলাদেশে অসংক্রমক রোগে যত মানুষ মারা যায় তার বেশিরভাগই মারা যায় হৃদরোগে। এর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ, যার অন্যতম কারণ এই ট্রান্স ফ্যাট। উচ্চ মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগজনিত মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। সংস্থাটির মতে, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষের শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। এছাড়াও ৫০০ কোটি মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাস করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। চলুন জানা যাক এই ট্রান্স ফ্যাট কি, কিভাবে উৎপন্ন হয়, এর প্রভাব ও প্রতিকারের উপায়।

ট্রান্স ফ্যাট কি?
ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স-ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ) হলো প্রাকৃতিক বা শিল্প উৎস থেকে আসা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। তবে এটি একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত তেমন ক্ষতিকর নয়।

ট্রান্স ফ্যাট কিভাবে উৎপন্ন হয়?
প্রাকৃতিক ট্রান্স-ফ্যাটের মধ্যে রয়েছে দুধ, মাখন, ঘি, গরুর মাংস, ছাগলের মাংসের মতো প্রাণীজ উৎস। শিল্পক্ষেত্রে উদ্ভিজ তেলের হাইড্রোজেনেশনের সময় ট্রান্স ফ্যাট উৎপন্ন হয়। আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেলই শিল্পে উৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ, শিশু-কিশোররা ও বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা প্রচুর পরিমাণে সিঙ্গারা, সমুচা, পুরি, জিলাপির মতো কড়া ভাজা খাবার গ্রহণ করে। এই খাবারগুলো সাধারণত পাম তেল দিয়ে ভাজা হয়। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। তেল বার বার পোড়ালে তা থেকে অক্সিজেন চলে যায় ও তাতে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয় আর এ ধরণের তেল দিয়ে কোনো কিছু ভাজলে সেটি মচমচে হয়। এছাড়া অনেক স্ট্রিট ফুড যেগুলো কড়া করে ভাজা হয় সেগুলোতেও ট্রান্স ফ্যাট থাকে। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ১০টি বিস্কুটের মধ্যে ৫ থেকে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে। এটা ডব্লিউএইচও নির্ধারিত বর্তমানের পরিমাণের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

মানবদেহে ট্রান্স ফ্যাট এর প্রভাব-
চিকিৎসকদের মতে, ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড অন্যান্য যেকোনো খাদ্যের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার রক্তের খারাপ কোলেস্টরেল বাড়িয়ে দেয়, আর মাত্রা কমায় ভালো কোলেস্টরেলের। আর খারাপ কোলেস্টরেল রক্তবাহী ধমনীতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে।

প্রতিরোধের উপায়-
ট্রান্স ফ্যাটজনিত হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় হলো স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণ। এর বাইরে আপাতত আর কোনো সমাধান নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায় তার ৪দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী এই ট্রান্সফ্যাট। সংস্থাটি ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং তারা বলছে সব ফ্যাট, তেল এবং খাবারে প্রতি একশ গ্রাম ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ সর্বোচ্চ দুই গ্রামে সীমিত করতে হবে। মানুষকে সচেতন হতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম, প্রচুর পানি পান এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

এই পাতাটি ৩০২বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626