ডায়েট শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত হলেও কিটো ডায়েট শব্দটি আমাদের অনেকের নিকট অপরিচিত। কিটো ডায়েট মূলত ডায়েটের একটি শাখা যার ব্যবহারের মাধ্যমে শরীরের ওজন দ্রুত কমানো যায়। মানুষের শরীর কর্মক্ষম রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন গ্লুকোজ যা শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে আসে। আর খাদ্যের অন্যান্য উপাদান যেমন- তেল, চর্বি শরীরের মধ্যে জমা হয়ে থাকে। ফলে এক সময় শরীরে মেদ জমে। শরীরের ওজন বেড়ে যায়। যার প্রভাবে নানা রকম শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমরা অনেক সময় ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকি। আজ আমরা এই টপিকে ডায়েটের একটি শাখা কিটো ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। আসুন আমরা আর সময় নষ্ট না করে জানার চেষ্টা করি কিটো ডায়েট কি এবং কেন আমরা এটির অনুসরণ করব।
কিটো ডায়েট কি?
কিটো ডায়েট; ডায়েট প্রক্রিয়ার একটি রূপ যেখানে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্যের কম ব্যবহার করে শরীরের ওজন কমানো যায়। এই প্রক্রিয়ায় আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাদ্য বেশি পরিমাণে খেতে হয়। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকেই দেহ মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি পেয়ে থাকে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেলে দেহ যে কিটোসিস অবস্থায় চলে আসে তার নাম কিটো ডায়েট। একটি আদর্শ কিটো ডায়েট প্রক্রিয়ায় খাদ্য উপাদানে ৬০% ফ্যাট, ৩৫% প্রোটিন ও ৫% কার্বোহাইড্রেট থাকে। এবার আসুন আমরা জেনে নিউ কিটো ডায়েট প্রক্রিয়ায় কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে এবং কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে না।
যে সব খাবার খাওয়া যাবে সেগুলো হলো-সবুজ শাক-সবজি, টক জাতীয় ফল, সকল প্রকার মাছ তবে তৈলাক্ত মাছ হলে আরো ভালো, ইঞ্জেকশনমুক্ত গরু ও খাসির মাংস, মুরগির ডিম, মাছের ডিম, সকল প্রকার বাদাম, ঘি, অর্গানিক বাটার, এক্সট্রা ভার্জিন ওলিভয়েল, দুধ চিনি ছাড়া রং চা, লেবু, আদা ও সামান্য লবন মেশানো গ্রিণ টি ইত্যাদি।
যে সব খাবার খাওয়া যাবে না সেগুলো হলো-শর্করা জাতীয় সকল খাবার যেমন-চাল, আটা দিয়ে বানানো সকল খাবার, সকল প্রকার ডাল, মাটির নিচে হয় এমন সব সবজি, চিনি, দুধ দিয়ে বানানো সকল খাবার, সয়াবিন তেল, সূর্য মুখী তেল, রাইস ব্যান তেল ও সাধারণ তেল দিয়ে বানানো সকল খাবার, ট্যানারি বর্জ্র থেকে উৎপন্ন খাদ্য খাওয়ানো হয় এমন সব মুরগির মাংস ইত্যাদি।
কিটো ডায়েট কেন?
অল্প কথায় বলা যায় যারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্যায়াম করে শরীরের ওজন কমাতে পারছেন না তাদের জন্য কিটো ডায়েট একটি আদর্শ ডায়েট পদ্ধতি। কেন আমরা কিটো ডায়েট অনুসরণ করব এর উত্তর জানার জন্য আমাদের কিটো ডায়েটের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হবে।
উপকারিতা-
১) কিটো ডায়েট মেনে খাবার খেলে মস্তিকের নিউরণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ফলে সমস্ত মস্তিকের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
২) এই পদ্ধতিতে খাবার খেলে দেহে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, ব্লাড প্রেসার ও ট্রাইগেøসিরাইড মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায় না। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
৩) গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কিটো ডায়েটে শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হয় না, শরীর সুস্থ থাকে।
৪) কিটো ডায়েট শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে। ফলে শরীরে Polycystic Ovary Syndrome এর প্রকোপ কমে যায়।
অপকারিতা
সঠিক ভাবে কিটো ডায়েট মেনে না চললে কিছু শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। যেমন-মাথা ব্যাথা, শারীরিক ক্লান্তি, ঘুম কম হওয়া, মাথা ঘোরা, ক্ষিদে বেড়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও শারীরিক ক্ষমতা কমে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধ, মাসল ক্র্যাম্প হতে পারে। বিভিন্ন পেটের রোগ এমনকি কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। তাই ডায়েট স্পেশালিস্ট এর পরামর্শ মতো চলতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়- সঠিক ভাবে এবং সঠিক মাত্রায় কিটো ডায়েট অনুসরন করলে আমরা শারীরিক উপকারিতা বেশি মাত্রায় উপলব্ধি করতে পারব। শারীরিক সুস্থতা ও বডি ফিটনেস ঠিক রাখতে কিটো ডায়েট একটি আদর্শ ডায়েট পদ্ধতি।