একটি শিশু একটি পরিবারের স্বপ্ন ও একটি দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই শিশুটি যদি হয় হৃদরোগে আক্রান্ত তবে তার সুস্থতা রক্ষা করা হয়ে উঠে ভীষণ কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রয়োজন ডাক্তার, স্বাস্থ্য কর্মী এবং পরিবারের সম্মিলিত প্রয়াস। জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে বাবা মা তথা পরিবারের কিছু বিষয় জানার কোন বিকল্প নেই এবং এই সচেতনতা তৈরির দায়িত্ব আমাদের সকলের।
জন্মগত ভাবে শিশুদের হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। উন্নত বিশ্বে আক্রান্তের হার প্রতি হাজারে ৮/৯ জন শিশু। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম গ্রহন করছে। এর মধ্যে ৮০% পরিবার দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। শিশুদের জন্মগত হৃদরোগ দুই ধরনের। সাধারন ও জটিল। সাধারন জন্মগত হৃদরোগ সাধারনত একটু দেরিতে প্রকাশ পায়, অথবা অন্য কোন কারনে চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। জন্মের পরপরই যদি লক্ষন প্রকাশ পায় তবে সেটা জটিল জন্মগত হৃদরোগ (Complex Congenital Heart Disease) এগুলোর চিকিৎসাও বিভিন্ন ধরনের। কোনটি মেডিকেল ট্রিটমেন্ট (ঔষধের মাধ্যমে) কোনটি ইন্টারভেনশন প্রক্রিয়ায় (ডিভাইস লাগানো) অথবা ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত ফলোআপ ও ঔষধ সেবনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের কয়েকটি নির্দিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে জন্মগত হৃদরোগ আক্রান্ত শিশুর জন্য উন্নত্মানের চিকিৎসা সুব্যাবস্থা রয়েছে।
হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার পাশাপাশি যে বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো শিশুটির খাদ্য-পুষ্টি ও বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ এবং শারীরিক ও মানসিক যত্ন।
খাদ্য ও পুষ্টিঃ
হৃদরোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এর কারন হলো হার্টে ছিদ্র/হার্ট দুর্বল থাকার কারনে, শরীরের রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য হার্ট কে বেশি বেশি কাজ করতে হয়। যার জন্য শরীরের বিপাক বেশি হয় এবং ক্যালরি চাহিদা বেড়ে যায়।
আবার এসব কারনে শিশুদের হজমেরও সমস্যা হতে পারে। অন্য স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় আক্রান্ত শিশুদের ওজন ও দৈহিক বৃদ্ধি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই কম থাকে।
খাওয়ানোর পরিমানঃ
কতুটুকু পরিমান খাবার খাওয়াতে হবে সেটা আসলে শিশুর বয়স ভিত্তিক তবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কি কি থাকবে তার মোটামোটি একটি ছক দেয়া হলোঃ
সব্জিঃ অন্তত ৩ বার ৩ প্রকার/দৈনিক ফলঃ অন্তত ৩ বার ৩ প্রকার/দৈনিক শস্য/সিরিয়ালঃ অন্তত ৪ - ৬ বার/দৈনিক দুগ্ধজাত পন্যঃ ২ বার দৈনিক বাদাম এবং বীজঃ ৪-৫ বার সপ্তাহে স্বাস্থ্যকর তেলঃ ৩ বার/দৈনিক মাছ/চর্বিছাড়া মাংসঃ সর্বোচ্চ ৩বার/দৈনিক চিনিযুক্ত খাবার/জুসঃ ৫ বার অথবা কম/সপ্তাহে
সহজ কথায় বলতে গেলে স্বাস্থ্যকর আমিষ (মাছ, ডাল, শীম, বাদাম) দৈনিক খাবে ৫-৬ বার এবং প্রতিবেলায় ফলও সব্জি আধিক্য থাকতে হবে। জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত তেল/চর্বি/চিনিযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
নবজাতক শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ৬ মাস পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হবে।
শারীরিক সুস্থতাঃ
দাঁতের যত্নে করনিয়ঃ নিয়মিত দাঁত পরিস্কার রাখা জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এমনকি অপারেশনের পরেও। দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে গিয়ে হার্ট ও ভাল্বের ক্ষতি করে। এটাকে বলা হয়
Endocarditis. এটি খুবই একটি জটিল সমস্যা এমন কি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই প্রতিবার খাবার পরে কুলি করা এবং দৈনিক ২বার (বিশেষকরে রাতে ঘুমানোর আগে) পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
সময় মতো পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যাবস্থা করতে হবে। অতিরিক্ত মোবাইল/কম্পিউটার/টেলিভিশন দেখা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে।
মানসিক সুস্থতাঃ
শারিরিক অসুস্থতা, দুর্বলতা ও হাসপাতালের পরিবেশ শিশুর মনের উপর প্রভাব ফেলে। তাই শিশুর সাথে গল্প করতে হবে, বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে এবং সীমিত পরিসরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশেষভাবে করনীয়ঃ
১। আক্রান্ত শিশুর জন্য পরিছন্ন পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
২। নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।
৩। নিয়মিত ঔষধ খাওয়াতে হবে এবং বয়স ওজন অনুসারে ঔষধের মাত্রা ঠিক করে নিতে হবে।
৪। সময় মতো টিকা দিতে হবে।
৫। সংক্রমন আক্রান্ত ব্যাক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এড়াতে হবে।
৬। একটু বড় শিশুকে নিজের রোগ সম্পর্কে জানাতে হবে ও নিজের যত্ন নেবার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
সুষম খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত ঘুম, শারিরিক ও মানসিক যত্ন শিশুর পুষ্টি ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। অতীতের তুলনায় জন্মগত হৃদরোগে বেঁচে থাকা শিশুর হার এখন অনেকটাই বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসেছে নতুন নতুন পরিবর্তন সম্ভাবনা। আমাদের সকলের সচেতনতা ও প্রচেষ্টায় আজকের এই শিশুগুলিকে একটি সুন্দর ও সুস্থ ভবিষ্যৎ আমরা উপহার দিতে পারি।
রাজডক কী? ফ্রী সদস্য হোন
Click Here
ডাক্তার হিসাবে যোগদান করতে Click Here স্বাস্থসেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে কল করুন 01753226626 নম্বরে (সকাল ১০টা থেকে রাত ৬টা)
রাজডক কী? ফ্রী সদস্য হোন
Click Here
ডাক্তার হিসাবে যোগদান করতে Click Here স্বাস্থসেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে কল করুন 01753226626, 01311336757 নম্বরে (সকাল ১০টা থেকে রাত ৬টা)