সাধারনত অপরিনত বা অপরিপক্ক শিশু বলতে বুঝায় যে সকল শিশু ৩৭ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পূর্বেই জন্মগ্রহন করেছে অথবা যে সকল শিশুর ওজন ২.৫ কেজির নিচে।
প্রায় ১.৫ কোটি শিশু পৃথিবী জুড়ে অপরিনত অবস্থায় জন্ম গ্রহন করে এবং প্রায় ১০ লক্ষ শিশু অপরিনত বা অপরিপক্ক জনিত কারনে মারা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখাগিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে জন্ম গ্রহন করে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপরিনত শিশু মৃত্যুর হার প্রতি ১০০ জনে ১৫ জন।
আমরা MDG পেরিয়ে এখন SDG লক্ষ্য স্থির করেছি। যেখানে ১৭ টি লক্ষ্য মাত্রা স্থির করা হয়েছে। ৩ নং গোলে নব্জাতকের মৃত্যু হয় NMR ও ৫ বছরের শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
একটি অপরিনত শিশুর ভ্রুন একটা পূর্ণ মেয়াদী শিশুর মত হয় না। তাই তাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। শিশুকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়ার পরে তাদের আলাদা ও পরিপূর্ণ যত্নের প্রয়োজন হয়। বাড়িতে পরিপূর্ণ যত্ন ব্যতিত শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না।
নিম্নে অপরিনত বা অপরিপক্ক শিশুর বাড়িতে যত্নের কিছু টিপস দেয়া হলোঃ
১। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখাঃ
অপরিনত বা অপরিপক্ক শিশুদের গায়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা খুবই জরুরি। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর তাপমাত্রা বজায় থাকে। এছাড়া শিশুকে পর্যাপ্ত পশাক পরাতে হবে। শিশুকে যে ঘরে রাখা হবে সেই ঘরের তাপমাত্রা অবশ্যই নিয়িন্ত্রন করতে হবে। যেন শিশুর শরিরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকে।
২। আপনার শিশুকে খাওয়ানঃ
আদর্শ ভাবে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। কেননা মায়ের দুধের বিকল্প কিছুই হয় না। অপরিনত শিশুর ল্যাকটেশনে সমস্যা হতে পারে। যদি শিশু মায়ের বুকের দুধ টেনে খেতে না পারে। তবে পাম্পের সাহায্যে মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ করে শিশুকে খায়াতে হবে।
৩। খাবারের সময় সূচি নির্ণয় ঃ
একটি অপরিনত বা অপরিপক্ক শিশু কে দিনে অন্তত ৮-১০ বার খাওয়ানো প্রয়োজন।আর শিশুকে নিয়মিত বিরতিতে খাওয়ানো উচিৎ। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন দুইবার খাওয়ানোর মাঝখানের ব্যবধান ৪ ঘন্টার বেশি না হয়।
৪। শিশুর বৃদ্ধির রেকর্ড রাখুনঃ
অপরিনত শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণে রাখা উচিৎ। এর জন্য একটি চার্ট রাখা যেতে পারে। এতে করে খুব সহজেই শিশুর শারীরিক বৃধির হার জানা যাবে।
৫। ইনফেকশন প্রতিরোধ করুনঃ
অপরিনত শিশু খুবই নাজুক হয় তাই পরিচ্ছতায় গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। শিশুর ইনফেকশন প্রতিরোধ এ শিশুকে কোলে নেয়ার পূর্বে অবশ্যই হাত ভালভাবে স্যানেটাইজার করে নিতে হবে। এবং সেই সাথে বাইরের দর্শনার্থীর সংখ্যা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৬। আপনার শিশুকে টিকা দিনঃ
নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির উপরে নজর রাখুন এবং শিশুর বয়স ও তালিকা অনুযায়ী শিশুকে টিকা দিন।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে অপরিনত শিশুর অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। একটি অপরিনত শিশু সঠিক সময়ে ঠিক মত যত্ন পেলে পূর্ণ মেয়াদী শিশুর মতই সমস্ত বিকাশ মূলক মাইলফলক অর্জন করতে পারবে।