ভিটামিন-সি যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (Ascorbic Acid)। এটি একটি জৈব অম্ল, যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। যার রাসায়নিক সংকেত C6H8O6, এটি সাদা দানাদার পদার্থ। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ ও ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের (dehydroascorbic acid) মত কিছু জারিত (oxidized) যৌগ বিদ্যমান। অ্যাসকরবেট বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, এ দুয়ের যেকোন একটি দেহে প্রবেশ করলে প্রাকৃতিকভাবে দুটি পদার্থই প্রস্তুত হয়। এর কারণ, এরা pH এর মানের তারতম্যের সাথে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এটি কমপক্ষে আট রকমের উৎসেচক সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিভিন্ন কোলাজেন সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেগুলোর অভাবে স্কার্ভি রোগের উপসর্গসমূহ দেখা দেয়।প্রাণীদের দেহে এই বিক্রিয়াসমূহ প্রধাণত ক্ষত-পূরণে ও কৈশিক রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। অ্যাসকরবেট জারণজনিত পীড়ন (oxidative stress) রোধে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
কোলাজেন তন্তু কি?
কোলাজেন হলো আমাদের দেহের সংযোগকারী টিস্যুগুলির প্রধান কাঠামোগত প্রোটিন। আমাদের দেহের মোট প্রোটিনের ২৫% থেকে ৩০% পর্যন্ত হলো কোলাজেন। হাড়, তরুণাস্থি (কার্টিলেজ), কণ্ডরা (টেন্ডন), চামড়া সন্ধিবন্ধনী (লিগামেন্ট) এবং ফ্যাসিয়ার অন্যতম মূল উপাদান এই কোলাজেন প্রোটিন। এর অতি উচ্চ প্রসার্য শক্তি (টেন্সাইল স্ট্রেংথ) আমাদের চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা(ইলাস্টিসিটি) ও দৃঢ়তার কারণ, যা বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পেতে থাকে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য-
এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন মূলত শাকসবজিতেই পাওয়া যায়। লেবু ও লেবুজাতীয় সব টক ফল ভিটামিন সির চমৎকার উৎস। কমলা, মালটা, আঙুর, পেঁপে, আনারস, জাম ইত্যাদি ফলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। সবুজ পাতা গোত্রের সব সবজি ও শাকেও পাওয়া যাবে এই ভিটামিন। এ ছাড়া কিছু মসলাজাতীয় উদ্ভিদ যেমন: কাঁচা মরিচ, পুদিনাপাতা বা পার্সলেপাতা ভিটামিন ‘সি’-র ভালো উৎস।
অভাবজনিত সমস্যা ও রোগ
১. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর অভাব রয়েছে, তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শরীরে শক্তি কমে যায়, অবসন্ন হয়ে পড়েন।
২. শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে বিরক্তিভাব দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
৩. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হয়, তাদের হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।
৪. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে গিঁটে ব্যথা বা পেশিতে ব্যথার সমস্যা হয়।
৫. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে দেহে কালশিটে দাগ পড়ে।
৬. ভিটামিন-সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এর ঘাটতি দেখা দিলে এসব অংশে সমস্যা হতে পারে।
৭. ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়াও ভিটামিন-সি-এর ঘাটতির লক্ষণ।
৮. ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।