করোনা রোগীদের লিভারের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন
একজন লিভার বিশেষজ্ঞ বলেছেন, আগে থেকেই লিভারের জটিলতায় ভুগছেন এমন রোগীদের করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হলে তাদের জন্য ক্ষতির ঝুঁকিটা বেশি।
বাংলাদেশের জাতীয় লিভার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘লিভার সমস্যাযুক্তদের এই মারাত্মক ভাইরাসের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। যারা অ্যাডভান্স লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত এবং যাদের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।’
তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, করোনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে প্রায়শই লিভারের ইনজুরি হয়ে থাকে এবং হালকা আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে লিভারের এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের লিভারের এনজাইমগুলোর হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর পরীক্ষা দ্রুত করা উচিত।
তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক যেসব ওষুধ দিয়ে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা করা হচ্ছে- সেগুলোর বিষাক্ত পদার্থ লিভারের যেমন ‘স্ট্যাটিনস, রিম্যাডিজিভার, টসিলিজুমাব, লোপিনাভির এবং রিটোনাভির’ হতে পারে।
তিনি বলেন, যদিও উত্থাপিত লিভারের এনজাইমগুলো এই ওষুধগুলোর পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের জন্য বাধা হওয়া উচিত নয়, তবে লিভারের এনজাইমগুলোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা করোনা চিকিৎসার জন্য কোনো পরীক্ষামূলক প্রোটোকলের অংশ হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রবর্তক সার্জন অধ্যাপক আলী বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সী লিভার প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং ইমিউনোসপ্রেসড করোনা সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হতে পারেন।
তিনি বলেন, হেপাটাইটিস বি বা সি-এর ফলাফলে যারা অ্যাডভান্স লিভারের রোগ (সিরোসিসসহ) ভালো হয়েছেন এবং যাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে সবাই করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সচেতন হওয়া উচিত, কারণ তাদের আরও মারাত্মক অসুস্থতার ঝুঁকি রয়েছে।
অটো ইমিউন হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগী, প্রিডনিসোলন বা অ্যাজাথিয়োপ্রিন গ্রহণকারীদের করোনার জন্য সতর্ক হওয়া উচিত, কারণ তারা সংক্রমণের ঝুঁকিতে বেশি।
অধ্যাপক আলী বলেন, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেয়া হয় যা লিভারের কার্যকারিতা রক্ষা করতে এবং প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধ উভয়ই করতে পারে।
লিভারের ক্ষতি হতে পারে এমন ওষুধ প্রয়োগের বিষয়েও নজর দেয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, লিভারের ক্ষতিগ্রস্ত রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এমন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেয়া হয়, লিভারের কার্যকারিতা রক্ষা করতে পারে এবং প্রদাহজনিত প্রতিরোধ যা উভয়ই করতে পারে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার সময় ওষুধ প্রয়োগে লিভারের আঘাতের বিষয়টি উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং সাবধানতার সঙ্গে দেখা দরকার।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বেশিরভাগ মানুষ হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থ হবেন এবং বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠবেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যারা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের মতো অন্তর্নিহিত তাদের চিকিৎসা সমস্যায় গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।