অনেকেই ওষুধের দোকান থেকে কিনে বা পুষ্টিবিদ, ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন, মিনারেলস ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। অনেকেই খাবার সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু অনেকেরই অজানা 'খাবার সাপ্লিমেন্ট' এর আসল অর্থ কি? আসুন সহজভাবে জেনে নেই খাবার সাপ্লিমেন্ট কি এবং কেন ব্যবহার হয়।
খাবার সাপ্লিমেন্ট কি: সাপ্লিমেন্ট অর্থ হলো পরিপূরক। ধরুন, কোনো একটি বস্তু সম্পূর্ণ নয়, একে পরিপূর্ণ করার জন্য বা এর অবস্থা উন্নত করার জন্য এতে কিছু উপাদান যোগ করা হলো, এটাই সাপ্লিমেন্টেশন। খাবার সাপ্লিমেন্টও একই, আমাদের নিয়মিত ডায়েটে কখনো কখনো কোনো একটি নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকলে বা দেহে সেই উপাদানের অভাব দেখা দিলে আমাদের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হয় সেই পুষ্টিউপাদানের চাহিদা পূরণের জন্য।
খুব সহজ একটি উদাহরণ হলো আমাদের প্রিয় ডালের চালের সবজি খিচুড়ি। যখন শুধু ভাত রান্না করা হয় বা খাওয়া হয় তখন আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয় না, কিন্তু যখন এর সাথে ডাল যোগ করা হয় তখন শর্করা, প্রোটিন উভয় পাওয়া গেলে, এতে এখন প্রয়োজনীয় খাবার তেল যোগ করে ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করা গেল, একইভাবে সবজি দিয়ে ভিটামিন মিনারেলস, মাংস বা ডিম যোগ করে আরো ভালো মানের প্রোটিন পাওয়া গেল। এভাবেই সাপ্লিমেন্টশন হয়ে থাকে।
তবে সমস্যা হলো সবসময় খাবার দিয়েই চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না, তখন পরামর্শ অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হয়। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত এ সকল সাপ্লিমেন্টগুলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, লিকুইড, পাউডার ইত্যাদি ফর্মে পাওয়া যায়। সাধারনত খাবার থেকে বা প্রাকৃতিক উপায়েই এদের নিষ্কাশন করে তৈরি করা হয় তবে কখনো কখনো সিনথেটিক উপায়েও তৈরি করা হয়। তাই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে সর্বদা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
খাবার সাপ্লিমেন্ট বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টে কি থাকে?
শুধু ভিটামিন যেমন ভিটামিন ডি, বি, সি বা মিনারসলস জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়ামই খাবার সাপ্লিমেন্ট না। ভিটামিন ছাড়াও, খাবার সাপ্লিমেন্টে মিনারেলস, ভেষজ বা অন্যান্য বোটানিকালস উপাদান, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম এবং অন্যান্য অনেক উপাদান থাকতে পারে। খাবার সাপ্লিমেন্ট বিভিন্ন আকারে তৈরি হয়, যার মধ্যে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, গামি এবং পাউডার, সেইসাথে পানীয় এবং শক্তি বার রয়েছে। যেমন- মাছের তেল (কর্ড লিভার ওয়েল), প্রোবায়োটিক, প্রোটিন পাউডার ইত্যাদিও খাবার সাপ্লিমেন্ট।
ওষুধ আর খাবার সাপ্লিমেন্ট কি এক?
ওষুধ আর খাবার সাপ্লিমেন্ট এক নয়। ওষুধের মতো খাবার সাপ্লিমেন্ট কোনো রোগকে সরাসরি টার্গেট করে না, তবে যেকোনো রোগ থেকে দেহকে প্রতিরোধ করতে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে ও লড়াই করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট ও সঠিক খাদ্যগ্রহণ করলে অনেক ধরনের রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। অন্যদিকে ওষুধ কোনো অসুখের সময় গ্রহণ করতে হয় সে অবস্থা থেকে আরোগ্য হবার জন্য।
কোনো একটি খাবার যদি না খেয়ে তার বদলে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করি তাহলে কি হবে?
না হবে না, কিছু খাবার সাপ্লিমেন্ট আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে সাহায্য করতে পারে যদি আপনি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার না খান কিন্তু সাপ্লিমেন্ট পুষ্টিকর খাবারের জায়গা নিতে পারবে না। আপনাকে অবশ্যই একটি সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যাবে।
পার্শপ্রতিক্রিয়া: সাধারণত প্রয়োজনীয় মাত্রায় গ্রহণ করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে আপনার কোনো এলার্জি থাকলে বা কোনো মেডিসিন গ্রহণ করলে (যেমন- রক্তচাপের ওষুধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, হৃদরোগের ওষুধ, কেমোথেরাপি) অবশ্যই তা আপনার পুষ্টিবিদকে অবগত করুন।
মনে রাখতে হবে: একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শেই খাবার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। কোনো ওষুধ গ্রহণ করলে তা তাকে জানান। পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন সেবন থেকে বিরত থাকুন। কোনো সার্জারির পূর্বে পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন। কখন কোন মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে তা জেনে নিন।