পৃথিবিতে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে মারা যায়। স্ট্রোকের ফলে মানুষ হারাচ্ছে কার্যক্ষমতা এবং ব্যায় হচ্ছে প্রচুর অর্থ। শুধুমাত্র ভুল চিকিৎসার কারণে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী হয়ে যাচ্ছে শারীরিক, মানষিক ও কর্মক্ষেত্রে অক্ষম। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে, হার্টে বা হৃদপিন্ডে-স্ট্রোক হয়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ট্রোক একটি মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতাজনিত রোগ।
স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর যত দ্রুত সম্ভব ফিজিওথেরাপি শুরু করা জরুরি। কারণ, ফিজিওথেরাপি যত দেরিতে শুরু হবে, রোগীর স্বাভাবিক জীবন ফিরে যাওয়া ততই দীর্ঘায়িত হবে। দুদিনের মধ্যে শুরু করতে পারলে ভালো। তবে স্ট্রোকের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ফিজিওথেরাপি শুধু বিশেষায়িত হাসপাতালেই সম্ভব। এমনকি রোগী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থাকাকালেও ফিজিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব। রোগী আইসিইউতে বা লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় দ্রুত ফিজিওথেরাপি শুরু করলে ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয়। তবে জানতে হবে স্ট্রোকের পর কোন সমস্যায় ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। রোগীর ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা, ল্যাব পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
স্ট্রোকের পর যেসব সমস্যা হয়ঃ
• শরীরের এক পাশের হাত-পা নড়াচড়া করতে না পারা বা কম শক্তি পাওয়া।
• হাত দিয়ে ভালো করে কিছু ধরতে না পারা।
• হাত-পায়ের পেশির স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া।
• শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
• সমন্বয়হীনতা বা কো-অর্ডিনেশনের অভাব।
• শরীরের স্বাভাবিক দেহভঙ্গি বা অ্যালাইনমেন্ট নষ্ট হওয়া।
• হাঁটাচলা করতে না পারা।
• শোয়া থেকে নিজে নিজে উঠে বসা বা বসে থাকার শক্তি না থাকা।
• মুখ বেঁকে যাওয়া।
• কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া।
• শ্বাসকষ্ট, কফ বের করা বা খাবার গেলার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া।
করণীয়ঃ
স্ট্রোক হলে সব রোগীরই একসঙ্গে সব কটি সমস্যা হবে তা নয়। একেকজনের একেক সমস্যা হতে পারে। কারও কম দিন, কারও দীর্ঘদিন সমস্যা থাকে। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক সমস্যার ধরন ও পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা করেন। এ ক্ষেত্রে রোগীর যদি হাত-পায়ের কোনোটায় নড়াচড়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়, সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাতের বা পায়ের নড়াচড়া স্বাভাবিক করতে ফিজিওথেরাপির সুনির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি রয়েছে। একইভাবে মুখ বেঁকে গেলে কিংবা কর্মদক্ষতা কমে গেলে অথবা অন্য কোনো সমস্যাতেও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয় । এ কারণেই স্ট্রোকের পরপরই ফিজিওথেরাপি শুরু করা জরুরি। কারণ, ফিজিওথেরাপি যত দেরিতে শুরু হবে, রোগীর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার বিষয়টি ততই দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমনকি কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে আজীবন সমস্যা থেকে যেতে পারে। স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি না পাওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়। কাজেই স্ট্রোক-পরবর্তী চিকিৎসায় রোগীকে আবারও কর্মক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির কোনো বিকল্প নেই।