রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

রক্তস্বল্পতার কারণ যখন আয়রনের ঘাটতি

১০-১০-২০২০

রক্তস্বল্পতার কারণ যখন আয়রনের ঘাটতি

১৮ মাসের মাহির টুক টুক করে সারা ঘর হেঁটে বেড়াতে শিখে গেছে কিন্তু একটুতেই হাঁপিয়ে যায়। মেজাজটাও খিটখিটে। একটুতেই মায়ের চুল ধরে টানে, দাদুর হাত কামড়ে দেয়, কাজের মেয়েকে চিমটি মারে খাওয়াতে গেলে। শুধু ভাত লবণ দিয়ে চটকে দিলে খায় আর সারাদিন বুকের দুধ।

বাসায় বেড়াতে আসা বান্ধবী মাহিরকে দেখে ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো, " কি রে তোর বাচ্চা এত ফ্যাকাশে কেন? " " ও একটু ফর্সা তো! " মায়ের কথায় মাথা নাড়ে বান্ধবী, " না না, ফর্সার জন্য না, ওর ঠোঁট, হাত দেখ, রক্ত নেই বললেই চলে। ঠিক মতো পরীক্ষা করা ডাক্তার দেখিয়ে! "

অগত্যা মাহিরের মা এসেছে শিশু হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার তো পারলে তখনই রক্ত পরীক্ষা করে ভর্তি দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন এসেছে ৭ গ্রাম %, আয়রন অনেক কম। মায়ের মাথায় হাত, কি করবে এখন?
আসুন জেনে নেই আয়রনের ঘাটতিজনিত এ্যানিমিয়া সম্পর্কে।

রক্তস্বল্পতা বা এ্যানিমিয়া কি
শরীরে রক্ত লাল দেখায় হিমোগ্লোবিন নামক পদার্থটির জন্য যার হিম অংশটুকু আসে আয়রন ঢেকে আর গ্লোবিন হচ্ছে প্রোটিন। রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও হৃদপিন্ড থেকে সারা শরীরে বহন করে নিয়ে যায় এই হিমোগ্লোবিন, সাথে পুষ্টিও।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলেই, হিমোগ্লোবিন কমে যায় ও আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এ্যানিমিয়া দেখা যায়।

আয়রন বা হিমোগ্লোবিন ঘাটতি কেন হয়?
১. সময়ের আগেই অপরিণত শিশু জন্মালে
২. মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে
৩. ৬ মাস বয়সে সময়মতো বাড়তি খাবার শুরু না করলে
৪. বাড়তি খাবারে আয়রনযুক্ত খাবার না থাকলে
৫. শরীরে কৃমি হলে
৬. দীর্ঘ সময় জটিল রোগ থাকলে বিশেষ করে কিডনী, লিভার, খাদ্য নালির অপারেশন
৭. হরমোনজনিত রোগ ( হাইপোথায়রড), অস্থিমজ্জার রোগ থাকলে, গরুর দুধ খাওয়ানো , অপুষ্টি, প্রচুর রক্ত ক্ষরন হলে।
৮. হিমোগ্লোবিনের জন্মগত ত্রুটি ( থ্যালাসেমিয়া) হলেও এ্যানিমিয়া হয় তবে এতে আয়রনের আধিক্য দেখা দেয় যা শরীরে বরং ক্ষতি করে উল্টো।

আয়রনের ঘাটতি হলে কি সমস্যা হবে?
১. বাচ্চা ফ্যাকাশে ও দূর্বল হয়ে যাবে
২. সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবে
৩. নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে ও সহজেই হাঁপিয়ে উঠবে
৪. মেজাজ খিটখিটে হবে এবং রাগ বেড়ে যাবে
৫. হাবিজাবি যেমন, মাটি, ময়লা, দেয়ালের পেইন্ট খেতে চাইবে
৬. ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পরবে
৭. পড়ালেখায় অমনোযোগী হবে

আয়রনের ঘাটতি পূরণের উপায়
১. অপরিণত শিশুকে জন্মের ২ সপ্তাহের মধ্যে আয়রন ও ফলিক এসিড খাওয়ানো শুরু করতে হবে
২. মায়ের বুকের দুধে পর্যাপ্ত আয়রন পেতে মাকে বেশী করে আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
৩. ৬ মাস পূর্ণ হলেই, বাচ্চাকে বাড়তি খাবার শুরু করতে হবে।
৪. সুজি, চালের গুড়া, গরুর দুধ না দিয়ে বাচ্চাকে বাড়তি খাবারে খিচুরি, ডিম, কলা, শাকসবজি ও পানি নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আয়রন শরীরে প্রবেশের জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
৬. ১ বছর বয়সে হলে নিয়মিত কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে পরিবারের সব সদস্যসহ।
৭. অপুষ্টি ও দীর্ঘমেয়াদি অসুখে পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. জন্মের পর রক্তের পরীক্ষা করাতে হবে হাইপোথাইরয়েড আছে কিনা, গর্ভাবস্থায় থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করতে হবে। প্রয়োজনে বিবাহের পূর্বে বাবামা বাহক কিনা সনাক্ত করতে হবে।

আয়রন যুক্ত খাবার
মুরগীর কলিজা, লাল মাংস, ডিমের কুসুম, মসুর ডাল, কাচা ও পাকা কলা, পেয়ারা, পেপে, লালশাক, কচু শাক, সয়াবিন, মিষ্টি আলু, লাল আটা ইত্যাদি খাবারে আয়রন পাওয়া যায়।
বলা হয়ে থাকে, প্রত্যেক বেলা ভারী খাবারের পর পর চা, কফি, দুধ না খেতে। এগুলো খাবার থেকে শরীরে আয়রন প্রবেশে বাধা দেয়।

যাদের পায়খানা কষা তারা আয়রনের ডোজ ১ম দিকে কমিয়ে খাবে। প্রচুর পানি খাবে ও আয়রনকে ফেরাস ফর্মে খাবে।
কাজেই, আয়রনের ঘাটতি পূরণ করলেই কেবল বাচ্চার এ্যানিমিয়া ২ সপ্তাহেই ভালো করা সম্ভব।


ডাঃ লুনা পারভীন
শিশু বিশেষজ্ঞ
ঢাকা শিশু হাসপাতাল
শ্যামলি।
(সংকলিত)

এই পাতাটি ৩২১বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626