প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম বা ঋতুস্রাবে ইমোশনাল সমস্যাটি কেন হয়?
প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম বা PMS-কে সহজভাবে বলা যায় কিছু ইমোশনাল সমস্যার সমষ্টি যেখানে শারীরিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে আবার নাও দিতে পারে। প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম অনেক সময় পেরি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম ও বলা হয়। কেননা এর লক্ষণসমূহ পিরিয়ডের আগে বা পরে যেকোনো সময়-ই দেখা দিতে পারে। পিরিয়ডের সময় হওয়া শারীরিক সমস্যাগুলো যেমন- তলপেটে ব্যাথা, স্তনে ব্যাথা এগুলোর সাথে ইমোশনাল বা মানসিক সম্পৃক্ততা না থাকলে এগুলো প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম নয়। প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম হলে ইমোশনাল সমস্যাগুলো অবশ্যই হবে, সাথে শারীরিক সমস্যা ও হতে পারে।
প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম কখন হয়
সাধারণত পিরিয়ড শুরু হওয়ার ১০ দিন আগে লক্ষণ শুরু হয় এবং পিরিয়ড শুরু হলে বা শুরু হওয়ার অল্প কিছু সময় আগে লক্ষণগুলো চলে যায়।
প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম এর লক্ষণসমূহ
১) দুশ্চিন্তা করা
২) মেজাজ খিটখিটে থাকা
৩) আনহ্যাপিনেস বা অসুখী মনে হওয়া
এই তিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এ ছাড়া আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-
১) স্ট্রেস
২) উদ্বিগ্ন হওয়া
৩) ঘুম না হওয়া
৪) মাথা ব্যাথা
৫) ক্লান্তি
৬) মুড এর পরিবর্তন
৭) ইমোশনাল সেনসিটিভিটি বেড়ে যাওয়া
৮) সেক্সে অনীহা
৯) নিজেকে দুঃখী মনে হওয়া
ব্যাক্তিভেদে ভিন্নতা
একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম ভাবে প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। যেমন, কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ৩/৪ দিন আগে অনেক দুশ্চিন্তা হতে পারে, কারো উদ্বিগ্নতা হতে পারে, কারো বা মেজাজ খারাপ হতে পারে। কিন্তু প্রতিটি চক্রে এর ভিন্নতা সাধারণত দেখা যায় না। যেমন, গত চক্রে যদি কারো মেজাজ খারাপ থাকে, সেক্ষেত্রে এই চক্রে দুশ্চিন্তা বা উদ্বিগ্ন থাকার ব্যাপারটা দেখা যায় না। তবে কম বেশি হতে পারে। যেমন, গতবারের চেয়ে এবার দুশ্চিন্তা কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম এ কাদের ঝুঁকি বেশি?
১) অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
২) বয়স বাড়া
৩) স্ট্রেসপূর্ণ জীবনযাপন
৪) ডিপ্রেশন এ থাকা
৫) পরিবারে আর কারো থাকলে
৬) খাদ্য- ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ভিটামিন ই ও ডি এর অভাবে।
রোগ নির্ণয়
রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এখানে কোন নির্দিষ্ট পরীক্ষা নিরীক্ষার উপায় নেই। তিনটি মূল বৈশিষ্ট্য থেকে মূলত রোগ নির্ণয় করা যায়।
১) পিরিয়ডের পূর্বে মানসিক বা ইমোশনাল লক্ষণ দেখা যাওয়া।
২) লক্ষণগুলো পিরিয়ডের ঠিক আগে বা শুরু হওয়ার পর চলে যাওয়া।
৩) দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হওয়া।
লক্ষণগুলো যে সময় শুরু হয়, ১০দিন আগে, সে সময়টায় সাধারণত ডিম্বাণু রিলিজ হয় অথবা চক্রের লুটিয়াল পর্ব চলে।
আপনার ও এমন হয় কিনা এটা জানার জন্য ক্যালেন্ডার এর পাতায় দাগ দিয়ে রাখুন। ঠিক ঋতুস্রাবের কয়েকদিন আগে মানসিকতার পরিবর্তন এবং পরে ঠিক হয়ে যাওয়া, দুটোই মার্ক করে রাখুন। অন্তত পর পর দুটো চক্রের রেকর্ড দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়।
কেন এমন হয়?
এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোনও উত্তর পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, পিরিয়ড চক্রে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য এমন হয়। লুটিয়াল পর্বে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের সাথে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের নিউরোট্রান্সমিটারের ক্রিয়ায় এটা হতে পারে। সেরোটোনিন ও গ্লুটামেট এমন-ই দুটো নিউরোট্রান্সমিটার।
প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম এর চিকিৎসা
চিকিৎসার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। সাধারণভাবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সাহায্য করতে পারে। চিকিৎসা করার জন্য আমরা মূলত SSRI গ্রুপের ওষুধ বেছে নিই। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই দেয়া যায়। হরমোন দিয়েও চিকিৎসা করা হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল এক্ষেত্রে ভাল কাজ করে। ক্লোনিডিন, ফিনাইল অ্যালানিন, NSAID এগুলো ও দেয়া হয়। প্রতিটি মানুষ আলাদা, তাই সবার চিকিৎসা পদ্ধতি ও আলাদা হবে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা না নিলে?
অনেকেই প্রি মেনসট্রুয়াল সিনড্রোম নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবেন না যেন এটা সাধারণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। যদি চিকিৎসা না নেয়া হয় তাহলে ক্লিনিক্যাল রোগ হতে পারে, যেমন – প্রি মেনসট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (Premenstrual dysphoric disorder), ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, সাইকিক ডিসঅর্ডার ইত্যাদি। আপনার দৈনন্দিন জীবন তো ব্যাহত হয় ই, আপনার নিকট জনের কাছেও সুখকর হয় না।
করনীয় কি?
১) নিয়মত স্বাস্থ্যকর খাবার খান
২) নিয়মিত ব্যায়াম করুন
৩) কাজে ডুবে থাকুন
৪) লবণ এবং চিনি খাওয়া কমিয়ে দিন
৫) ক্যাফেইন পরিহার করুন
৬) স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন
জীবন একটাই। রোগ ছোট হোক বা বড়, চিকিৎসা নিন, ভাল থাকুন আর জীবনকে উপভোগ করুন।
রাজডক কী? ফ্রী সদস্য হোন
Click Here
ডাক্তার হিসাবে যোগদান করতে Click Here স্বাস্থসেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে কল করুন 01753226626 নম্বরে (সকাল ১০টা থেকে রাত ৬টা)
রাজডক কী? ফ্রী সদস্য হোন
Click Here
ডাক্তার হিসাবে যোগদান করতে Click Here স্বাস্থসেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে কল করুন 01753226626, 01311336757 নম্বরে (সকাল ১০টা থেকে রাত ৬টা)