করোনাসহ যেকোনো ধরনের রোগব্যাধির সাথে লড়াই করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো সুস্বাস্থ্য। আর নীরোগ, সুস্থ শরীরের মূল ও সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। আসুন জেনে নেই এমন ৯ টি খাদ্যাভ্যাস যা মেনে চললে আপনিও হতে পারেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
১ আস্ত খাবারঃ
সুষম খাবারের মূল ব্যাপার হল সেই খাবার যতটা সম্ভব আস্ত খেতে চেষ্টা করা, যেইভাবে সেগুলো উৎপাদিত হয়। তাই, কোন খাবার ক্যানজাত বা প্যাকেটজাত না কিনে আস্ত ও ফ্রেস কেনার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- ফল দিয়ে বানানো বিভিন্ন খাবারের চেয়ে আস্ত ফল খাওয়া বেশি উপকারি। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে অতিরিক্ত ক্যালরি, চিনি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। সুতরাং, আস্ত খাবার গ্রহন করা সব দিক থেকেই উপকারি।
২ দানাদার খাবারঃ
পরিশোধিত কার্ব যেমন- সাদা আটার পাউরুটি বা রুটি, পাস্তা বা চাল উৎপাদনের সময় প্রচুর পরিমানে পুষ্টিকর উপাদান হারায়। তাই পরিশোধিত কার্বের পরিবর্তে অপরিশোধিতদানাদার গমের পাউরুটি বা রুটি, পাস্তা বা লাল চালের খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এছাড়াও এসবের পরিবর্তে ওটমিল (ওটস), পপকর্ণ, বার্লি খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, দানাদার খাবার গ্রহন করার ফলে হার্টের অসুখ, টাইপ টু ডায়বেটিক এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
৩ ফলমূল ও শাকসবজির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোঃ
এই দুই মৌসুমি খাবার সুষম খাবারের প্রধান অনুষঙ্গ। যদি টাটকা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া যায়, সেটা সবচেয়ে ভালো। তবে বিকল্প হিসেবে প্যাকেটজাত বা ক্যানজাত ফলমূল ও শাকসবজিও খাওয়া যাবে। তবে সেক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে যে এতে কোন অতিরিক্ত চিনি বা লবন মেশানো আছে কিনা। শরীরের ক্যালরির চাহিদা ও কায়িক পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-৯ টা ফল ও সবজি খেতে হবে।
৪ অতিরিক্ত চিনি ও লবন দেখে নিনঃ
সুষম খাবারগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে চিনি ও লবনের পরিমান কম থাকে, এতে অতিরিক্ত চিনি বা লবন যোগ করার ফলে এর গুনগত মান কমে যায়। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার কেনার সময় দেখে নিন এতে অতিরিক্ত চিনি বা লবন যোগ করা আছে কিনা। খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য চিনি বা লবনের পরিবর্তে মসলা বা প্রাকৃতিক হার্বস ব্যবহার করতে পারেন।
৫ কৃত্রিম উপাদান বাদ দিনঃ
সুষম খাদ্য তালিকায় কৃত্রিম রং, চিনি, প্রিজারভেটিভ বা অন্য কোন কৃত্রিম উপাদানের কোন জায়গা নেই। তাই খাবার কেনার সময় লেভেল পড়ে দেখে নিন এতে কোন কৃত্রিম উপাদান মেশানো আছে কিনা।
৬ পর্যাপ্ত পানি পান করুনঃ
মিষ্টি বা চিনি যুক্ত কোমল পানীয় বা জুসের পরিবর্তে কম ক্যালরিযুক্ত পানীয় যেমন- পানি বা হারবাল চা পান করুন। পানি খেলে একদিকে যেমন পেট ভরবে ও ক্ষুধা মিটবে অন্যদিকে এটি আপনার ক্লান্তি দূর শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করবে। শুধু পানি খেতে খারাপ লাগলে এতে লেবু বা পুদিনা পাতার নির্যাস যোগ করতে পারেন।
৭ ক্যাফেইনঃ
কারো কারো মতে সুষম খাদ্য তালিকা থেকে ক্যাফেইন পুরোপুরি বাদ দিতে হবে, আবার কারো মতে এগুলো পরিমান মতো গ্রহন করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ৪০০ মিলিগ্রামের (৩-৫ আউন্স কফি) বেশি ক্যাফেইন গ্রহন করা উচিত নয়।
৮ অরগানিক খাবারঃ
অরগানিক খাবার উৎপাদনে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। তাই, বলা হয়ে থাকে সুষম খাবার খেতে হলে অরগানিক খাবার গ্রহন করা সর্বোত্তম। আপনি চাইলে লোকাল কোন খাবার কিনতে পারেন যার উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনি অবগত বা এমন কোন খাবার যার খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। কারন ক্ষতিকর কীটনাশক সবজি বা ফলমুলের বাইরের দিকে প্রয়োগ করা হয়। খোসা ছাড়িয়ে খেলে তাই কীটনাশকের ক্ষতিকর দিক এড়ানো সম্ভব।
৯ মাছ-মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারঃ
মাছ-মাংস, দুগ্ধজাত খাবার ও ডিম এমন জায়গা থেকে কিনুন যারা এসব উৎপাদনে কোন রকম অ্যান্টিবায়োটিক বা গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে না। সামুদ্রিক খাবারের লেভেলে অরগানিক কিনা সেটা উল্লেখ করা থাকে না। সেক্ষেত্রে এতে পারদের পরিমান দেখে নিন। প্রোটিনের সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য উৎস হল বিভিন্ন ধরনের নাট, বীন ও শিম জাতীয় খাবার।