রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

জরায়ু ক্যান্সারের কারন লক্ষণ ও করনীয়

২৭-১০-২০২০

জরায়ু ক্যান্সারের কারন লক্ষণ ও করনীয়

জরায়ু ক্যান্সার বর্তমানে দেশে হাজার হাজার নারী এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত। সচেতনার অভাব এবং লজ্জার কারণে জরায়ু ক্যান্সারের পরীক্ষা করাতে চান না সিংহভাগ নারী। যখন রোগ ধরা পড়ে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না।
অনেকেই মনে করেন যে, জরায়ু ক্যান্সার হয়তো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে হয়ে থাকে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। যে কোন বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। তবে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়স্ক বা এর চেয়েও বেশি বয়সের নারীরা জরায়ু ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। জরায়ু ক্যান্সারকে 'সাইলেন্ট কিলার' বলা হয়ে থাকে।

জরায়ু ক্যান্সারের কারণঃ
জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকির্পূণ অবস্থানে থাকেন বয়স্ক ও দরিদ্র মহিলারা।
হিউম্যান প্যাপিলোমা নামে একধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ৯৯% জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এই ভাইরাস যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। অন্যান্য কারণেও এই ভাইরাস জরায়ু ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
যেমন- অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক, একাধিক যৌন সঙ্গী, একাধিক পূর্ণ গর্ভধারণ, কলামাইডিয়া, গনোরিয়া, সিফিলিস বা হরপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ-২ সংক্রমণ, ধূমপান, দীর্ঘ সময়ের জন্য গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

এছাড়া বাল্যবিবাহ, ১৮ বছরের কম বয়সে সন্তানধারণ, অধিক সন্তান, ঘন ঘন সন্তানধারণ, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপুষ্টি, বহুগামিতা ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে নারীরা জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় বেশি।

জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ:
জরায়ু ক্যান্সার একটি ধীর বর্ধনশীল ক্যান্সার। এই ক্যান্সার হতে সাধারণত ১০-১৫ বছর সময় লাগে। প্রথম অবস্থায় এই ক্যান্সারের কোন উপসর্গ দেখা যায় না। জরায়ু ক্যান্সার হলে নিম্নোক্ত উপসর্গগুলো হতে পারে।

১. দুই মাসিকের মধ্যে রক্তপাত
২. যৌন সংগমের পর রক্তপাত
৩. পেলভিক পরীক্ষার পর রক্তপাত
৪. পেলভিক ব্যথা যা মাসিক চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়
৫. ভারি বা অস্বাভাবিক স্রাব, স্রাবে দুর্গন্ধ থাকতে পারে
৬. অনেক বার প্রস্রাব করা আর প্রস্রাব করার সময় ব্যথা অনুভর করা
৭. আচমকা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
৮. সবসময় বমি বমি ভাব কিংবা বার বার বমি হওয়া।
৯. যৌনাঙ্গের চারপাশে চাপ চাপ বোধ হওয়া।
১০. অভ্যস্ত থাকার পরেও যৌনমিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া।
১১. অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করা।
১২. নারীদের মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ হওয়া।

এই রোগে আক্রান্তদের পুরো শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার পর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের কাছে যান এবং তাদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যককেই বাঁচানো সম্ভব হয়। তাই প্রাথমকি পর্যায়ে জরায়ু-মুখ ক্যান্সারকে নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধ করতে শনাক্তকরণ করা জরুরি। যারা প্রথম থেকেই চিকিৎসা করান, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভবনা ৯৫%। তাই সুস্থ থাকতে এই অসুখের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ সম্পর্কে জেনে রাখুন। লক্ষণগুলো দেখা দিলে হাসপাতালে গিয়ে ক্যান্সার স্ক্রিনিং করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন।

জরায়ূ ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি
একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়। সাধারণত ডিএনএ অথবা পেপ টেস্টের মাধ্যমে সম্ভাব্য জরায়ু ক্যান্সারের ডিসপ্লাসিয়া শনাক্ত করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এইচপিভি সংক্রমণের ঝুঁকি নির্ধারণ করা হয়। বায়পসির মাধ্যমে প্রি-ক্যান্সার বা ক্যান্সার কোষ নিশ্চিত করা হয় জরায়ু ক্যান্সার।

জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের যা করণীয়
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য এখন টিকা পাওয়া যায়। মেয়েদের বয়স যখন ১০ থেকে ১২ বছর তখন তিনটি ডোজে ছয় মাসের মধ্যে এই টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা মূলত বিয়ের পূর্বে অথবা যৌন সক্রিয় হওয়ার আগে দেওয়া উচিত। এছাড়াও নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে জরায়ু ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

১. টিকা প্রদান করে অবিবাহিত মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সার থেকে নিরাপদ রাখা
২. কোন লক্ষণ চোখে পড়লেই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা
৩. জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা
৪. নারীদের সাহস জোগাতে এক্ষেত্রে পুরুষদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে
৫. ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নারীদের বছরে একবার করে পরীক্ষা করা উচতি। তবে পর পর দুইবার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে ৩ অথবা ৫ বছর পরপর পুনরায় পরীক্ষা করাবেন। ঝুঁকিপূর্ণ নারীরা ৩ বছর পর পর পরীক্ষা করাবেন।


ডা: রেবেকা সুলতানা
এমবিবিএস, এমডি(প্যাথলজি), সিসিডি(বারডেম)

এই পাতাটি ১০৪৬বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626