শিশুদের জ্বরের সাথে খিচুনী, কারন ও করণীয়। ডা: আলম ইফতেখার বেলায়েত, নবজাতক শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ
আসসালামু আলাইকুম, আমি ডা: আলম ইফতেখার বেলায়েত, নবজাতক শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আজকে আপনাদের সামনে এসেছি একটি অসুখ নিয়ে, আপনাদের সাথে কিছু কথা বলব। সেটি হলো শিশুদের জ্বর এর সাথে খিচুনি। এমন কোন বাচ্চা নাই যাদের জ্বর আসে নি, এমন রুগী পাওয়া দুস্কর। বাচ্চার জ্বর এর সাথে খিচুনি হলে বাবা মা থেকে শুরু করে, আমার অভিজ্ঞতা মতে পাড়া প্রতিবেশি সবাই উদবিগ্ন হয়ে পড়ে। তাদের কাছে জ্বরের সাথে খিচুনি একটি আতংকের নাম। জ্বরের সাথে খিচুনি নিয়ে কিছু তথ্য ও উপাত্ত আপনাদের সামনে তুলে ধরব। জ্বরের সাথে খিচুনি কে আমরা সাধারনত মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় ফেব্রাইল সিজার বলে থাকি।এই ফেব্রাইল সিজার হওয়ার কারন কি? আমাদের যে মস্তিস্ক বা ব্রেন এ মেডিকেল সাইন্স এর ভাসায় যেটাকে ব্রেন স্টিক বলে। এই ব্রেন স্টিক যখন তাপ মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। তখন একটিতে ইম্ব্যলেন্স বা ভারসাম্ম্য হিনতার সৃষ্টি হয়। এই ভারসাম্ম্য হিনতার কারনেই বচ্চার খিচুনি হয়।
এই জ্বরের সাথে খিচুনি বা ফেব্রাইল সিজার এর কিছু বিশিষ্ট রয়েছে
১। এটি সাধারণত বাচ্চার বয়স এর উপরে নির্ভর করে। সাধারণত বাচ্চার বয়স ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত এটি দেখা যায়।
২। এই খুচুনিটি সাধারণত বাচ্চার সারা শরীরে হয়ে থাকে।
৩। একটা হাত, পা বা সশরীরের কোন একটা অংশ খিচুনি হয় না, এটা সাধারনত পুরো শরীরে হয়ে থাকে।
৪। এই খিচুনি সাধারণত ১০ মিনিট বা এর কম সময়ে থাকে এর বেশি না।
৫। এর সাথে বাচ্চার সরদি কাসি ও উপসর্গ থাকলে থাকতে পারে।
জ্বরের সাথে খিচুনি বা ফেব্রাইল সিজার এর প্রতিকার
বাচ্চার জ্বরের সাথে খিচুনি বা ফেব্রাইল সিজার হলে প্রথমেই মা বাবা, বা বাচ্চার আত্মীয় স্বজনেরা সাধারণত আতঙ্ক গ্রস্থ্য হয়ে পড়ে। তাই সবার প্রথমে তাদের আসস্ত করতে হবে যে, জ্বরের সাথে খিচুনি বা ফেব্রাইল সিজার তেমন একটা ভয়ের কারন না। এবং খেয়াল রাখতে হবে যে, বাচ্চার শরিরে অতিরিক্ত পোশাক থাকলে তা খুলে ফেলতে হবে বা ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে। বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কলের পানি দিয়ে সমস্ত শরির মুছে দিতে হবে। ঔষধ প্রয়োগ
প্যারাসিটামল সিরাপ বা ডায়াজিপাম বা সিডিল জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। সিরাপের ডোজ (এটা চুড়ান্ত না) ১৫ মিলিগ্রাম পার কেজি হিসেবে দিতে হয়। আর ১০ কেজির নিচে বাচ্চা হলে সিডিল ট্যাবলেট এর ৩ ভাগের ১ ভাগ খাওয়াতে হবে। আর ১০ কেজির উপরে হলে অর্ধেক দিতে হবে। উপদেশঃ বাচ্চার খিচুনি হলে বাচ্চাকে সোজা করে বা চীত করে না রেখে ডান বা বাম কাত করে শুইয়ে রাখতে হবে এবং বাচ্চার গলাটা একটা উচু রাখতে হবে। যাতে নিশ্বাস এর কোন সমস্যা না হয়।
জ্বরের সাথে খিচুনি বা ফেব্রাইল সিজার ৫ বছর বয়েস পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই বিষয়টা বাচ্চার বাবা মা কে খেয়াল রাখতে হবে। যে বাচ্চার জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব হলেই প্যারাসিটামল সিরাপ বা নাপা সাথে সিডিল খাওয়াতে হবে। প্রয়োজনে যেখানেই যাক সাথে করে প্যারাসিটামল সিরাপ বা সিডিল রাখতে হবে।