রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

সাইকোলজিস্ট না সাইকিয়াট্রিস্ট, কার কাছে যাবেন?

০৭-০২-২০২৩

সাইকোলজিস্ট না সাইকিয়াট্রিস্ট, কার কাছে যাবেন?

মনের রোগের জন্য আবার ওষুধ লাগে নাকি, কাউন্সেলিং করলেই চলবে!’ অথবা ‘মানসিক রোগের চিকিৎসায় কাউন্সেলিং কোনো কাজের না, ওষুধ তো চলছেই!’, কিংবা ‘মানসিক রোগের ওষুধ ভীষণ কড়া আর ভয়ংকর, অনেক সাইড অ্যাফেক্ট’ কিংবা ‘মানসিক রোগের ওষুধ মাত্রই ঘুমের ওষুধ’। এ রকম ধারণা বেশির ভাগ মনোরোগীর স্বজনদের।
নিজের বা স্বজনের মনের সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন, কিন্তু এ ধরনের মন্তব্য আর স্বপ্রণোদিত উপদেশ শোনেননি এমন মানুষ বিরল। একদিকে মানসিক স্বাস্থ্য আর রোগ নিয়েই রয়েছে নানা কুসংস্কার, তার ওপর এর চিকিৎসা নিয়েও বিভ্রান্তির শেষ নেই। বিভ্রান্তির এক প্রান্তে রয়েছে অপচিকিৎসা—পানিপড়া, তেলপড়া, কবচ, জাদুটোনা, ওঝার ঝাড়ফুঁক ইত্যাদি। আরেক প্রান্তে রয়েছে মূলধারার চিকিৎসা নিয়ে অপপ্রচার। কখনো কখনো উচ্চশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, ধনী, গরিব, শহর, গ্রাম, নানা পেশার মানুষের মধ্যে মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়ে যে বিভ্রান্তি দেখা যায়, তা প্রকারান্তরে মানসিক রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। আর ক্ষতিটি বড় হয়ে যায় যখন রোগীরা কোনো আস্থাভাজন ব্যক্তির কাছ থেকেই এমনটা শুনে থাকেন।

মনে রাখতে হবে, মানসিক রোগও কিন্তু ‘রোগ’। অন্যান্য রোগের মতোই এ রোগে মানুষের দেহে আর মনে পরিবর্তন ঘটে। আমাদের যেমন শরীর আছে, তেমনি মনও আছে। মনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মানসিক প্রক্রিয়া বা মেন্টাল প্রসেস। চিন্তাশক্তি, অনুভব করা, স্মরণ রাখা, আবেগকে পরিচালিত করা—সবকিছুই কিন্তু মানসিক প্রক্রিয়া। আর এই মানসিক প্রক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের কিছু রাসায়নিক পদার্থ—যাকে বলা হয় নিউরোট্রান্সমিটার। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের নির্বাহী কাজ মিলেই আমাদের এসব মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়।

অনেকেই মনোবিদ (সাইকোলজিস্ট) এবং মনোচিকিৎসক (সাইকিয়াট্রিস্ট)-এর পেশা দু’টিকে গুলিয়ে ফেলেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করলেও দু’টি পেশার মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ ফারাক রয়েছে, তা অনেকেরই জানা নেই।

মনোবিদ এবং মনোরোগচিকিৎসকদের মধ্যে পার্থক্য:
প্রথমে বুঝতে হবে, দু’টি বিষয় এবং বিশেষজ্ঞের মধ্যে পার্থক্য। সাইকোলজি বা মনস্তত্ত্ব বিষয়টি মানুষের মন, অনুভূতি এবং ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। প্রাথমিক ভাবে দর্শনের একটি শাখা হলেও ১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে সাইকোলজি বিষয়টি আলাদা একটি বিষয় হিসাবে জায়গা করে নেয়। সাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি কী ভাবে মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং ব্যবহারিক দিককে প্রভাবিত করে, তা খতিয়ে দেখে। একই সঙ্গে মানুষকে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাইকোথেরাপির মাধ্যমে নানারকম পন্থা বাতলে দিয়ে সাহায্য করেন।

অন্য দিকে, সাইকিয়াট্রি বা মনোরোগবিদ্যা হল চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা, বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যব্যাধি চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করে। সাইকিয়াট্রিস্টদের তাই মানুষের আত্মা বা হৃদয়ের চিকিৎসক বলা হয়। সাইকোলজিস্টদের মতোই সাইকিয়াট্রিস্টরাও সাইকোথেরাপির সাহায্য নেয়। তবে মানসিক অসুস্থতার জন্য যে জৈবিক কারণগুলি দায়ী, তা বুঝে নিয়ে ওষুধের সাহায্যে সেগুলি সরিয়ে তোলে সাইকিয়াট্রিস্টরাই।

শিক্ষাগত চাহিদা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে পার্থক্য:
মনোবিদ হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের সাইকোলজিতে ব্যাচেলর্স, মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ডিগ্রির প্রয়োজন। এ ছাড়াও, বেশ কিছু বছরের পেশাদারি অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে। অন্য দিকে, মনোচিকিৎসক হওয়ার জন্য এমবিবিএস-এর পর ১ বছরের ইন্টার্নশিপ এবং তারপর সাইকিয়াট্রিতে এমডি ডিগ্রি থাকতে হবে। এর পর সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে লাইসেন্স পাওয়ার পর কোনও সরকারি হাসপাতালে ন্যূনতম ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই সময়ে তাঁদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবেন সিনিয়র ফিজিশিয়ানরা। এরপর তাঁরা নিজেরা আলাদা ভাবেও রোগী দেখতে পারেন।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে পার্থক্য:
মনোবিদেরা সাধারণত সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করেন। সাইকোথেরাপির যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মনোবিদেরা চিকিৎসা করেন, সেগুলি হল: সাইকোঅ্যানালিসিস এবং সাইকোডাইনামিক থেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, হিউম্যানিস্টিক থেরাপি, হোলিস্টিক থেরাপি ইত্যাদি। কোনওরকম ওষুধ ছাড়া রোগীদের সুস্থ করার জন্যই কাজ করেন এঁরা। সাধারণত আলাদা ভাবে রোগীদের দেখলেও, অনেক সময় গ্রুপ থেরাপির মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়।

অন্য দিকে, সাইকিয়াট্রিস্টরা সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার উপরেই বেশি ভরসা রাখেন। জীবনবিজ্ঞান, নিউরোকেমিস্ট্রি-র ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকায় মস্তিষ্কে নানারকম নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস, চিকিৎসাসংক্রান্ত ইতিহাসও যে মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী , তা এঁরা বুঝতে পারেন। তবে, শুধু ওষুধ নয়, প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য থেরাপিরও সাহায্য নেন এঁরা।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে সুস্থ এবং কর্মমুখী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দুই পেশার মানুষের অবদানই অনস্বীকার্য। এমনকি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই দুই পেশার মানুষকে হাতে হাত মিলিয়ে চলতে হয়। তাই দু’টি পেশা এবং বিষয়ের পার্থক্য ভালভাবে বুঝে নিয়ে পড়ুয়ারা তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারেন। সেই মতো কোনও পড়ুয়া চিকিৎসাবিজ্ঞান না হিউম্যানিটিজ-এর দু’টি পৃথক শাখা নিয়ে কলেজ স্তরে পড়াশুনো করবেন, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

এই পাতাটি ৪৩৮বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626