রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

এবার ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কলেরা

০৬-০৪-২০২২

এবার ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে কলেরা

চৈত্রের শুরু থেকেই দাবদাহ চলছে। এর সঙ্গে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। শুধু আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ঢাকার হাসপাতালেই কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগীর চাপ বাড়ছে।
প্রতিবছরই গরম এলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এর কিছু কারণও রয়েছে। গরমে শহরাঞ্চলে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়। সাধারণত পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে ডায়রিয়া হয়। গরমের সময় রাস্তা-ঘাটে, হাট-বাজারে, যানবাহনে দূষিত পানি ও শরবত পানের প্রবণতা বাড়ে। এ ছাড়া এবার করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানা, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অনীহা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আইসিডিডিআরবি বলছে, এবার ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ কলেরা। এতে সাদা চালধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়, দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় শরীর। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমেই এ জীবাণু ছড়ায়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, মাছি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশনের সময় অপরিষ্কার হাতের ব্যবহার—এ ধরনের প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী।
ডায়রিয়া দুই ধরনের হয়, যেমন—তীব্র ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।

সংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?
• ভাইরাসজনিত, যেমন : রোটা ভাইরাস, এস্ট্রো ভাইরাস, এডেনোভাইরাস ইত্যাদি।
• ব্যাকটেরিয়াজনিত, যেমন : সালমোনেলা, শিগেলা, ই কলাই, ভিব্রিও কলেরি, ক্যামপাইলোব্যাকটর ইত্যাদি।
• পরজীবীজনিত, যেমন : জিয়ারডিয়া, ক্রিপটোসপরিডিয়াম, সাইক্লোসপরা ইত্যাদি।

অসংক্রামক ডায়রিয়া কেন হয়?
• কিছু অসুখ, যেমন : ডাইভার্টিকুলাইটিস, পায়ুপথে বা অন্ত্রে ক্যানসার, আইবিএস, আলসারেটিভ কলাইটিস ইত্যাদি।
• কিছু ওষুধ, যেমন : ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক, জোলাপ ইত্যাদি।

দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার কারণ
• জিয়ারডিয়া ইনটেসটিনাথিস
• স্ট্রংগিলয়ডিয়াসিস
• এনটারোপ্যাথিক ই. কলাই
• খাদ্য হজম না হওয়া
• অন্ত্রের কৃমি ইত্যাদি।

কখন পরীক্ষা করাবেন?
তীব্র ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে
• দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে
• রক্তের রুটিন ও কালচার পরীক্ষা
• পায়খানার রুটিন ও কালচার পরীক্ষা
• বিশেষ ক্ষেত্রে সিগময়েডস্কপি।

চিকিৎসাব্যবস্থা
তীব্র ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে তীব্র এবং সম্ভাব্য সংক্রামক ডায়রিয়ার সব রোগীকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে, যাতে পরিবারের অন্য কারো মধ্যে এটা ছড়াতে না পারে। তীব্র ডায়রিয়ার চিকিৎসায় প্রধানত তিনটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
১. তরল প্রতিস্থাপন ২. অ্যান্টিবায়োটিক অথবা জীবাণুবিরোধী ওষুধ ৩. ডায়রিয়াবিরোধী ওষুধ।

তরল প্রতিস্থাপন
ডায়রিয়ার চিকিৎসার প্রধান লক্ষ্য হলো পানির ঘাটতি পূরণ করা এবং পুনরায় যাতে পানিশূন্যতার সৃষ্টি না হয়, সে ব্যবস্থা করা। এ সামান্য ও মাঝারি ধরনের পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে পানিশূন্যতা পূরণ করা সম্ভব। রোগীর যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার রোগীকে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি রোগীকে অন্যান্য তরল ও পানীয় খেতে দিতে হবে।
মারাত্মক পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে রোগীকে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হবে।

অ্যান্টিবায়োটিক/জীবাণুবিরোধী ওষুধ
ডায়রিয়ার চিকিৎসায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী তরল ও ইলেকট্রোলাইট প্রতিস্থাপনে ভালো হয়ে যায়, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। তবে কলেরা সন্দেহ হলে, জ্বর থাকবে কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে পায়খানা পরীক্ষা করে সঠিক জীবাণু নির্ণয় করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ভালো।
কলেরার ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিন দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ৫০ মিলিগ্রাম বিভক্ত মাত্রায় তিন দিন। অথবা ফুরাজোলিডন দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে পাঁচ মিলিগ্রাম চারবার বিভক্ত মাত্রায়, তিন দিন। অথবা ইরাইথ্রোমাইসিন দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ৩০ মিলিগ্রাম চারবার বিভক্ত মাত্রায় তিন দিন।
শিগেলোসিসের ক্ষেত্রে ন্যালিডিক্সিক এসিড দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ৫৫ মিলিগ্রাম চারবার বিভক্ত মাত্রায় পাঁচ থেকে সাত দিন। অথবা কোট্রাইমক্সাজল দৈনিক দুবার সাত দিন। বিকল্প হিসেবে এমপিসিলিন অথবা পিভমেসিলিনাম ব্যবহার করা যেতে পারে। অ্যামিবিয়াসিসের ক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ৩০ মিলিগ্রাম ৫ থেকে ১০ দিন অথবা টিনিডাজল দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ৬০ মিলিগ্রাম তিন দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

জিয়ারডিয়ার ক্ষেত্রে মেট্রোনিডাজল দৈনিক প্রতি কেজি শারীরিক ওজনে ২০ মিলিগ্রাম পাঁচ দিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডায়রিয়াবিরোধী ওষুধ
ডায়রিয়াবিরোধী ওষুধ ব্যবহারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সংক্রামিত পাক-আন্ত্রিক প্রদাহ থাকলে এসব ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে অথবা শিশুদের আমাশয়ের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ ব্যবহার করলে ক্ষতি হতে পারে।
সাধারণভাবে ডায়রিয়াবিরোধী ওষুধের মধ্যে লোপারামাইড বেশি ব্যবহৃত হয়। তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে চার মিলিগ্রাম একত্রে, তারপর প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর দুই মিলিগ্রাম দেওয়া যেতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধটি দেওয়া যাবে না।

দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে
ডায়রিয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। যদি কোনো কারণ পাওয়া না যায়, তাহলে জিয়ারডিয়া ল্যাম্বলিয়ার সংক্রমণের চিকিৎসা দিলে উপকার পাওয়া যায়।
ভ্রমণের সময় ডায়রিয়া হলে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রতিরোধ
ডায়রিয়া প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতনতাই প্রধান। ডায়রিয়া রোগের সঙ্গে ঘনবসতি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সম্পর্ক রয়েছে। দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। মাছি ডায়রিয়ার জীবাণু ছড়াতে সাহায্য করে। তাই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকলে এবং কঠিনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এই পাতাটি ১৯০বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626