রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

বাসার  গুরুজনের এখন থেকেই যত্ন নিন

২৪-০১-২০২২

বাসার গুরুজনের এখন থেকেই যত্ন নিন

পরিবারের বটবৃক্ষ। ছায়া বিলিয়ে চলেছেন পরম মমতায়। শুভ কাজে যেমন তাঁর আশীর্বাদ নেওয়া হয়, তেমনি পরিবারের যেকোনো বিপদে একটি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তের জন্যও ছুটে যাওয়া হয় তাঁর কাছে। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা তো এমনই আশ্রয়স্থল।

আজীবন কনিষ্ঠদের জন্য ভেবে চলেন তাঁরা। তবে তাঁদের জন্যও আমাদের কিছু ভাবার আছে বইকি।

তাঁদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করাটা পরিবারের সবার দায়িত্ব। জেনে নেওয়া যাক তেমন কিছু বিষয়।

সুস্থ থাকুক বটবৃক্ষ
পরিবারের গুরুজনের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, অবসরযাপন (কর্মচাঞ্চলে৵র সময়টা পেরিয়ে তিনি হয়তো এখন সারা দিনই অবসর সময় কাটান), বিনোদন—সব দিকেই খেয়াল রাখুন।

এভাবে তাঁর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগলে (যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস) তাঁকে নিয়মিত ফলোআপ তো করাতেই হবে (অর্থাৎ পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে)। কোনো রোগ না থাকলেও চল্লিশোর্ধ্ব প্রত্যেক মানুষকে বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। বছরে একবার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত প্রত্যেকেরই।

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সব ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। কম বয়সীদের মধ্যে জটিলতা তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু পরিবারের গুরুজনদের এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখুন অবশ্যই। বাড়িতে অন্য কেউ এলে তাঁরাও এই বিষয়গুলো মেনে চলছেন কি না, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। বাড়ির কাছে কোথাও হয়তো হাঁটতে যাচ্ছেন পরিবারের গুরুজন। তাঁর মাস্ক পরে বের হওয়াটা নিশ্চিত করুন।

হয়তো বয়োবৃদ্ধ বাবার সারা জীবনের অভ্যাস নিজের হাতে বাজার করা। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে তাঁর যে ভিড় এড়িয়ে চলা উচিত, সেটি তাঁকে বুঝিয়ে বলুন। এ নিয়মগুলো কিন্তু কেবল করোনাভাইরাসই নয়, অন্যান্য অনেক জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে।

এ ছাড়া যা করতে হবে
• বয়স্ক ব্যক্তির খাবার প্রস্তুত কিংবা পরিবেশনের আগে হাত ধুয়ে নিন নিয়মমাফিক। তাঁকে সেবাদান করা ব্যক্তি যাতে সেবা দেওয়ার সময় হাত পরিষ্কার রাখেন, তা নিশ্চিত করুন।
• তিনি নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে পারছেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাঁর পোশাক এবং অন্যান্য অনুষঙ্গের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন।

খোঁজ নিন, খবর নিন
বয়সজনিত কারণে চোখে কোনো সমস্যা হতেই পারে। তিনি দৈনন্দিন কাজকর্মে কোনো অসুবিধা বোধ করছেন কি না, তা জিজ্ঞেস করুন মাঝেমধে৵ (দীর্ঘ সময় ধরে চশমা ব্যবহার করলেও এই খোঁজ নিতেই হবে। কারণ, চশমা ব্যবহার করা সত্ত্বেও দৃষ্টিক্ষমতার পরিবর্তনের কারণে অসুবিধা হতেই পারে)। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ অনুভব করছেন কি না, তা জিজ্ঞেস করুন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় যেন আপনার মধ্যে কোনো ব্যস্ততা ফুটে না ওঠে।

সংকোচ ভেঙে কিছু বিষয় জানুন
• মেনোপজের পরেও কোনো কোনো নারীর রক্ত যেতে পারে। এমন বিষয় হয়তো নিজের ছেলের সঙ্গে আলাপ করতে সংকোচ বোধ করেন মা। এসব বিষয়ে তাঁকে সহজ করে নিন। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য কোনো নারী সদস্যের সহায়তা নিন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

• স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং হিসেবে প্রতি মাসে নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত প্রত্যেক নারীর। এ সম্পর্কে আপনার পরিবারের বয়স্ক নারীকে জানান। প্রয়োজনে তাঁকে এই কাজটিতে সহযোগিতা করুন।

সহজ হোক জীবনধারা
বয়স হলে হাঁটুব্যথায় ভোগেন অনেকেই। হাঁটুব্যথার চিকিৎসায় জীবনধারার পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন প্রার্থনা করতে হাঁটু মুড়ে নিচে না বসে চেয়ারে বসা। তাহলে আপনার দায়িত্ব হলো, এই চেয়ারটি তাঁর ঘরে ঠিকঠাকভাবে রাখা। ঠিক তেমনিভাবে কারও হাঁটার জন্য লাঠি কিংবা ওয়াকারের প্রয়োজন হলে সেটির ব্যবস্থা করা। লিফট ছাড়া হয়তো তাঁর ওঠানামার সমস্যা, এদিকে বাড়ির লিফট বন্ধ থাকল তাঁর নামার সময়টাতেই। সম্ভব হলে তাঁর ওঠানামার সময় একটু এদিক-ওদিক করে দিন। নইলে সেই সময় লিফট চালু করার ব্যবস্থা করুন। সামাজিকভাবে অন্যদেরও উচিত এমন কাজে সহযোগিতা করা (নিয়ম সবার জন্য সমান—এ রকম কথা শুনিয়ে ওই বয়োজে৵ষ্ঠ ব্যক্তিকে হীনম্মন্যতার শিকার বানিয়ে ফেলবেন না)। রিকশায় করে তাঁকে কোথাও নিতে হলে রিকশা রাখতে বলুন কোনো উঁচু জায়গা ঘেঁষে, সম্ভব হলে অল্প দূরত্বের জন্যও গাড়ির ব্যবস্থা করুন (তবে পা-দানি যেন বেশি উঁচু না হয়)।

দুর্ঘটনা এড়াতে
শিশুদের নিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে যেমন আলাদা করে ভাবতে হয়, বয়স্কদের বেলায়ও কিন্তু তাই। বয়স্ক ব্যক্তির জন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

• মেঝেতে কিছু পড়ে (পানি, তেল, পাউডার ইত্যাদি) পিচ্ছিল হয়ে গেলে তা যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলে মেঝে পিচ্ছিলতা থেকে মুক্ত করতে হবে।

• বাথরুম বা গোসলখানার দেয়ালে বেশ কিছু হাতল (দরজার হাতলের মতো) বসিয়ে দিতে পারেন, যেন হঠাৎ পা পিছলে গেলেও হাতল ধরে ভারসাম্য রাখা যায়।

• প্রয়োজনের সব জিনিস রাখুন তাঁর হাতের নাগালে (যাতে খুব নিচু হয়ে তাঁকে কিছু নিতে না হয় কিংবা মই বেয়ে ওঠার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করতে না হয়)।

• বিদ্যুৎ ও আগুন–সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে সচেষ্ট থাকুন।

ভুলে যাওয়াই রোগ
অনেকেই অনেক কিছু ভুলে যান এই বয়সে। মনে করিয়ে দেওয়াটাও এক বিরাট দায়িত্ব। সময়মতো তাঁর খাবার খাওয়া ও ওষুধ সেবন নিশ্চিত করুন। সপ্তাহের সাত দিনের তিনবেলার ওষুধ একটি বাক্সে (একুশ খোপের বাক্স) গুছিয়ে রাখতে পারেন (কিংবা তিনবেলার ওষুধ তিনটি আলাদা বাক্সে)। তবে প্যাকেট থেকে ওষুধ বের করে রাখা যাবে না।

রসনাবিলাস না কি সচেতনতা
তিনি হয়তো মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন কিংবা ভাত খাওয়ার ঝোঁক একটু বেশি। কিন্তু এদিকে তাঁর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। কিংবা কিডনির সমস্যার কারণে আমিষ খাবারে রয়েছে বিধিনিষেধ। যে–ই না তিনি হাতটা বাড়িয়েছেন খাবারের বাটির দিকে, অমনি হয়তো অফিসফেরত ক্লান্ত সন্তান কড়া গলায় বলে উঠলেন, ‘বাবা, তোমার না এসব খাওয়া বারণ!’ অসহায় বাবা হয়তো শারীরিক দিক থেকে উপকৃত হলেন; কিন্তু মানসিকভাবে? স্বাভাবিক প্রফুল্লতা হারালেন তিনি একটি বাক্যেই। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে বুঝিয়ে বলাই কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব। এমনকি প্রয়োজনে তাঁকে তাঁর পছন্দের খাবার অল্প পরিমাণে খেতে দিয়ে সারা দিনের খাদ্য তালিকায় অন্য কোনো খাবার কমিয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে, সেটি চিকিৎসক কিংবা পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে রাখাটাও কর্তব্য। কর্মব্যস্ত মানুষ হয়তো সহজ নাশতায় অভ্যস্ত, কিন্তু পরিবারের গুরুজন চান একটু চিরাচরিত খাবার। একবার ভাবুন, এই মানুষই জীবনের এতগুলো বছর পার করেছেন আপনার চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে। তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্য একটু সময় দিলেনই না হয়।

অবসর, বিনোদন ও অন্যান্য
• তিনি যা করতে পছন্দ করেন, তা করার সুযোগ করে দিন। ঘরের কাজ নিতান্ত যদি করতেই চান তিনি, তাহলে সহজ ব্যবস্থা করে দিন (যেমন দাঁড়িয়ে কাটাকোটা করার উপযোগী বিশেষ বঁটি)। বই কিনে আনতে পারেন, সহজ কোনো মাধ্যমে তাঁর পছন্দের অডিও ক্লিপ চালানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। কখনো ঘুরতে নিয়ে যেতে পারেন। রেস্তোঁরা থেকে তাঁর পছন্দের খাবার অর্ডার করতে পারেন। আবার হয়তো দিনের এক বেলা একটু সময়ের জন্য পাশে বসলেন, সাধারণ দুটি কথা বললেন—এতেই পরিতৃপ্ত তিনি।

• নাতি-নাতনি বা অন্যান্য প্রিয়জনকে ছোটখাটো উপহার কিনে দিতে ইচ্ছা হতে পারে তাঁর। সেই উদ্দেশ্য মাথায় রেখে বয়স্ক ব্যক্তির হাতে কিছু টাকা দিয়ে রাখতে পারেন (তবে কৌশলে কারণ, আপনি যে উদ্দেশ্যে টাকা তাঁর হাতে দিচ্ছেন এটা বুঝতে পারলে তিনি তা নিতে কুণ্ঠাবোধ করতে পারেন)। হয়তো নাতনি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। সেই সামান্য টাকা কয়টি খরচ করে নাতনিকে একটি ছোট্ট উপহার কিনে দিয়েই মানসিক প্রশান্তি মিলবে তাঁর।

• বন্যা বা ভূমিকম্পের মতো দুর্ঘটনায় কখনো বয়স্কদের পেছনে ফেলে চলে যাবেন না। জীবনে যা-ই ঘটুক, আপনজনের পাশে থাকুন।

এই পাতাটি ১৬৫বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626