রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার: নীরব এই ঘাতক থেকে বাঁচতে আপনি যা যা করবেন

১৭-১০-২০২১

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার: নীরব এই ঘাতক থেকে বাঁচতে আপনি যা যা করবেন

বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন।
'বাংলাদেশ জনমিতি স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮'-এর হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার জনের একজন উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন বিশ্বের প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ। আর এই সমস্যায় সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর মারা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কী?

হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
দু'টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় - যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার। প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়। যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ হলে কী সমস্যা তৈরি হয়?
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে বা হার্ট ফেল করতে পারে। এছাড়া, এমন সময় রক্তনালীর দেয়াল সঙ্কুচিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, মস্তিষ্কে স্ট্রোক বা রক্তক্ষরণও হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।
আর বিশেষ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়ে একজন মানুষ অন্ধত্বও বরণ করতে পারেন।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আফরোজা আনোয়ার জানান যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "যাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব হয় না, তাদের ক্ষেত্রে সেটিকে প্রাইমারি বা এসেনশিয়াল ব্লাড প্রেশার বলা হয়ে থাকে।"
"উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো, অনেক সময়ই উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষ্মণ দেখা যায় না। লক্ষ্মণ না থাকলেও দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং রোগী হয়তো বুঝতেই পারেন না যে তার মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে।"

অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বয়স ৪০ হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অন্তর ব্লাডপ্রেশার মাপা দরকার বলে মন্তব্য করেন মিজ আনোয়ার। আর যারা দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের প্রতি সপ্তাহে একবার প্রেশার মেপে দেখা উচিত। তবে একবার রক্তচাপ বেশি দেখা গেলেই যে কারও উচ্চ রক্তচাপ আছে, সেটা বলা যাবে না। পর পর তিন মাস যদি কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যায়, তখনই বলা যাবে যে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে।

লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে:
• প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো
• ঘাড় ব্যথা করা
• বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
• অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা
• রাতে ভালো ঘুম না হওয়া
• মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া
• অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
এসব লক্ষণ দেখা দিলে নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করতে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ
• সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে
• অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
• পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
• নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে
• প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে
• ধূমপান বা মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে
• দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে
• শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে

উচ্চ রক্তচাপ হলে কী করবেন

জীবনযাপনে পরিবর্তন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য কয়েকটি বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে:
• খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া - লবণের সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।
• ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা - ধূমপান শরীরে নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনী ও শিরার নানারকম রোগ-সহ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
• ওজন নিয়ন্ত্রণ করা - শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। বেশি ওজনের মানুষের মধ্যে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়।
• নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা - নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃৎপিণ্ড সবল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কম করা - রাগ, উত্তেজনা, ভীতি অথবা মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘসময় ধরে মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
• খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা - মাংস, মাখন বা তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেও রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত করে ফেলে। এর ফলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যেতে পারে।
এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করে ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

এই পাতাটি ৪৪৬বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626