রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

শিশুর ত্বক যত্নে থাক

২০-০১-২০২১

শিশুর ত্বক যত্নে থাক

আবহাওয়া ঠান্ডা। এই সময়ে শিশুর ত্বকের বড় সমস্যা শুষ্কতা। তবে সমস্যা এড়িয়ে শিশুকে ঝরঝরে রাখতে পারেন একটু যত্ন নিয়েই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, ‘যেহেতু আবহাওয়া শুষ্ক, তাই শিশুর ত্বকেও শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। তবে শুষ্কতার ভয়ে খুব ঘন ঘন লোশন বা তেল লাগানো ঠিক নয়। কারণ বারবার লোশন বা তেল লাগানো হলে ত্বকের স্বাভাবিক ছিদ্রগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এতে ত্বকে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।’

আবার ত্বক শুষ্ক থাকলে চুলকানি হতে পারে, দেখা দিতে পারে জীবাণুর সংক্রমণ। তাই শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখতে সতর্কতা জরুরি, এমনটাই জানা গেল তাঁর কাছ থেকে। শিশুদের জন্য জলপাই তেল বেশ কার্যকর। ওদের ত্বকের উপযোগী লোশনও লাগানো যেতে পারে। ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। একবার কোনো সাবানে শিশুর অ্যালার্জি দেখা দিলে আর কখনোই ওই উপাদানে তৈরি সাবান ব্যবহার করা যাবে না। পোশাকের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। কোনো কাপড়ে শিশুর অ্যালার্জি হলে পরবর্তী সময়ে ওই উপাদানের পোশাক না পরানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন জানালেন, শিশুর গোসলের পর হালকাভাবে শরীর মুছে দিয়েই ময়েশ্চারাইজার লাগানো ভালো। গোসলের পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। গ্লিসারিনযুক্ত সাবান শিশুদের জন্য ভালো। শীতের পোশাকের নিচে হালকা সুতির পোশাক পরানো হলে শিশু স্বস্তি পাবে। এ ছাড়া এ সময়টাতে পালংশাক, ফুলকপিসহ অন্য যেসব সবজি পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়ে স্যুপ বা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন।

অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার শিশুর যত্নে দিয়েছেন আরও পরামর্শ—

২ বছরের কম বয়সী শিশু
শীতকালে এই বয়সের শিশুদের প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। এক দিন পর পর গোসল করালেই শিশুর ত্বক ভালো থাকবে। শিশুর গোসলের জন্য কুসুমগরম পানি ব্যবহার করুন। গোসলের পর জলপাই তেল বা শিশুর ত্বকের উপযোগী হালকা কোনো ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগিয়ে দিতে পারেন।

২ থেকে ৭ বছরের শিশু
এই বয়সী শিশুরা বেশি খেলাধুলা করে। বাইরে গিয়ে খেলাধুলা শুরু করা এবং অন্যদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের উপযুক্ত সময় এটি। আজকাল অনেক শিশুই ৩ বছর বয়স থেকে প্রাক বিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে যেতে শুরু করে। এই বয়সী শিশুদের সবকিছুতেই আগ্রহ বেশি। জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি ওদের। দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত শিশুদের বাধা দেবেন না। খেলা শেষে ও বাইরে থেকে ফেরার পর অবশ্যই হাত-পা পরিষ্কার করিয়ে দিন। খেলার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘেমে গেলে বা গরম লাগলে ভারী শীতের পোশাক খুলে দিন। ঘাম মুছেও দিতে হবে। ওদের অবশ্যই কুসুমগরম পানি

দিয়ে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। গোসলের সময় সাবানও ব্যবহার করা যাবে। তবে সাবানটি হতে হবে শিশুর ত্বকের উপযোগী। গোসলের পর জলপাই তেল বা শিশুদের উপযোগী লোশন লাগিয়ে দিন।

৮ থেকে ১২ বছরের শিশু
এই বয়সী শিশু অনেকটাই নিজের যত্ন নিতে শিখে যায়। ঘেমে গেলে শরীর মুছে নেওয়া বা ভারী কাপড় খুলে ফেলা, কুসুমগরম পানিতে গোসল, গোসলের সাবান, ত্বকের উপযোগী লোশন বা জলপাই তেল লাগানোর মতো কাজে শিশুকে গুছিয়ে দিতে সাহায্য করুন।

নবজাতকের বাড়তি যত্ন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ‘নবজাতকের বয়স ১৫ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের তেল, লোশন, পাউডার লাগানো ঠিক নয়। ১৫ দিন বয়স পার হওয়ার পর শিশুর ত্বকে জলপাই তেল লাগানো শুরু করতে পারেন। তবে সেটিও দিনে এক থেকে দুবারের বেশি নয়। জলপাই তেলের বদলে নারকেল তেলও লাগানো যেতে পারে।’

তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, শিশুকে জন্মের তিন দিনের মধ্যে গোসল করানো ঠিক নয়। যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে জন্মেছে, তাদের এক দিন পর পর গোসল করানো যেতে পারে। তবে যেসব শিশু পূর্ণ গর্ভকাল পার হওয়ার আগেই জন্মেছে অথবা যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম, তাদের সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন গোসল করাতে হবে। গোসলের আগে বা পরে তেল মালিশ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

শিশুর জন্মের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে কিছু র‌্যাশ উঠতে দেখা যায়। এই সময়ে র‍্যাশ ছাড়া শিশুর অন্য কোনো সমস্যা থাকে না। এটিকে অনেকে মাসি-পিসি রোগ বলে থাকেন। এতে ভয় পাওয়র কিছু নেই। ধীরে ধীরে র‌্যাশ ভালো হয়ে যায়। এ সময় নবজাতকের ত্বকে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে দেখা যায়। নবজাতকের ত্বকে ছোট ছোট গোটা (যেগুলোতে পুঁজ জমে থাকে) দেখা দিলে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, এ সমস্যার চিকিত্সা শুরু করতে দেরি হলে পরবর্তী সময়েতে পুরো শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে গিয়ে শিশু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। নাভি পাকলে মানে নাভি থেকে পুঁজ পড়লে, দুর্গন্ধ ছড়ালে কিংবা নাভির চারপাশ লাল হয়ে গেলেও চিকিত্সা নিতে দেরি করবেন না। নাভিতে এমন মারাত্মক সংক্রমণ এড়াতে শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭ দশমিক ১ শতাংশ ক্লোরহেক্সিডিন লাগানোর কর্মসূচি শুরু হয়েছে সারা দেশেই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র একবার এ দ্রবণটি নাভিতে লাগিয়ে দিতে হয় এবং নাভিতে লেগে থাকা বাড়তি দ্রবণ মুছে ফেলতে হয় না।

সরিষার তেল নয়
সরিষার তেল শিশুর জন্য একেবারেই ভালো নয়, এমনটাই জানালেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুর ত্বকের অস্বস্তিকর অনুভূতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় সরিষার তেল। তাই এ তেল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। অনেকে শিশুর ঠান্ডা লাগলে সরিষার তেল ব্যবহার করেন। এমনকি নাকে প্রয়োগ করেন। এমন কাজ কখনোই করবেন না। নাকের মাধ্যমে শ্বাসনালিতে এ তেল ঢুকে গিয়ে শিশুদের মারাত্মক ধরনের নিউমোনিয়া হতে পারে বলে জানালেন অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার।

এই পাতাটি ৫২৬বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626