রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

ডিপ্রেশন: প্রচলিত কথা ও আসল বিষয়

১৯-০৯-২০২০

ডিপ্রেশন: প্রচলিত কথা ও আসল বিষয়

প্রচলিত কথাঃ কঠোর পরিশ্রমের ফলে ডিপ্রেশন দূর হয়
প্রায় প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন অবসাদে আক্রান্ত, তাই খুব কমন এই সমস্যার প্রতিকার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কতো গুলো অর্ধ সত্য বা ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। এই জাতীয় একটি ধারনা হলো কঠোর পরিশ্রম করুন, ভালো থাকুন।এটা হয়তো মন খারাপের ক্ষেত্রে সত্যি হতে পারে, কিন্তু ডিপ্রেশন সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। অতিরিক্ত কাজ করা ক্লিনিকাল অবসাদের লক্ষণ হতে পারে, বিশেষত পুরুষদের মধ্যে।

প্রচলিত কথাঃ ডিপ্রেশন কোন অসুখ নয়
ডিপ্রেশন একটি গুরুতর সমস্যা, বিশেষত এটি আমেরিকান প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অক্ষমতার শীর্ষ কারণ। তবে এখনও মানুষ একে সাধারণ মন খারাপ মনে করে ভুল করে। জিনতত্ত্ব, হরমোন, স্নায়ু কোষ রিসেপ্টর এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে গবেষণার মাধ্যমে এই অসুস্থতার উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। অবসাদে মস্তিষ্কেরস্নায়ু গুলো অস্বাভাবিকভাবে কাজ করে।

আসল বিষয়ঃ পুরুষদের সমস্যা নির্ণয় করা কঠিন
হতাসাগ্রস্থ পুরুষদের ক্ষেত্রে তাদের প্রিয়জন, এমনকি ডাক্তারও তাদের প্রকৃত সমস্যা নির্ণয় করতে পারে না। কারন পুরুষ মানুষ নারীদের মতো নিজের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত খুলে বলতে পারে না, এমনকি অনেক সময় অনেক ডিপ্রেশনগ্রস্থ ব্যক্তি আসলে কোনোমন খারাপ লাগা বা হতাশা অনুভব করেন না। বরং এর পরিবর্তে তারা বিরক্ত, রাগান্বিত ও অস্থির বোধ করেন। অনেক সময় তারা কোন কারন ছাড়াই রাগে ফেটে পড়েন। আবার কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, নেশাগ্রস্থ হওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।

প্রচলিত কথাঃ ডিপ্রেশন কি আত্মকরুনা?
আমাদের সমাজ শক্তের ভক্ত, আর যারা তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায় তাদের খুব সহজেই “অভিযোগকারী” নাম দিয়ে দেয়। কিন্তু ডিপ্রেশনগ্রস্থ মানুষেরা অলস নন, বা তারা চান না যে অন্যরা তাদের প্রতি করুনা দেখাক। আর তারা চাইলেই ডিপ্রেশন দূর করে দিতে পারে না। ডিপ্রেশন একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যা মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত। অন্যান্য অসুখের মতো, যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যাও দূর করা সম্ভব।

আসল বিষয়ঃ যে কেউ ডিপ্রেশনগ্রস্থ হতে পারে
হোক সে সফল বা ব্যর্থ, লাজুক বা চঞ্চল, অবসাদে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। সমস্যাটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে দ্বিগুণ বেশি দেখা যায়, তবে নারীরা চাইলেই তাদের সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেন। সমস্যাটি সাধারণত শৈশবের শেষের দিকে, আনুমানিক ২০ বছর বয়সের দিকে দেখা দেয়। তবে, যে কোন বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। শারীরিক ভাবে অসুস্থ মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশন দেখা দেওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। আবার, হতাশা থেকেও মানুষ ধীরে ধীরে অবসাদের দিকে ধাবিত হয়।

আসল বিষয়ঃ ডিপ্রেশন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে
ডিপ্রেশন আপনার মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে পারে, আপনি হয়তো একে সাধারন হতাশা থেকে আলাদা করতে পারবেন না। হতে পারে, হঠাৎ করে একদিন আপনি আপনার কর্মক্ষেত্র, স্কুল বা সবার সাথে সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন। ডাইস্টাইমিয়া নামক এক ধরনের মানসিক সমস্যা বছরের পর বছর ধরে আপনার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে যা ধীরে ধীরে আপনার কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করে। কিছু ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন খুব খারাপ পর্যায়ে চলে যায়, সেক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

প্রচলিত কথাঃ চিকিৎসা মানেই ওষুধ
"প্রোজ্যাক নেশন (Prozac Nation)" সম্পর্কে সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও, ডিপ্রেশন কাটাতে ওষুধের সাহায্য নেওয়া খুব সাধারন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে আপনি ডাক্তারের কাছে গেলেই যে তারা আপনাকে ওষুধ দেবে ব্যাপারটি তা নয়, যদিও অবসাদের ক্ষেত্রে ওষুধ বেশ ফলদায়ক।বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, হালকা বা মাঝারি ধরনের অবসাদের ক্ষেত্রে “টক থেরাপি” খুব ভালো কাজে দেয়। এমনকি যদি আপনি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ব্যবহারও করেন, এটি আপনার জন্য খুব বেশি কার্যকরী নাও হতে পারে। শুধুমাত্র আপনার ডাক্তার আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন যে কখন আপনার ওষুধ গ্রহন করা উচিৎ আর কখন নয়।

প্রচলিত কথাঃ ডিপ্রেশনগ্রস্থ ব্যক্তি অনেক বেশি কাঁদেন
এটা সবসময় ঠিক নয়। অনেকেই আছেন অনেক বেশি মন খারাপের সময়েও কাঁদেন না। তার পরিবর্তে তারা মানসিকভাবে নিজেদের মধ্যে শূন্যতা, অবসন্নতা বোধ করেন। এমনকি খুব বেশি সমস্যা না দেখা গেলেও, এসব মানুষদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবন প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।

আসল বিষয়ঃ পারিবারিক সূত্রে পাওয়া সমস্যাই ভবিতব্য নয়
আপনার বংশে যদি কারো মানসিক সমস্যা থাকে থাকে, খুবই স্বাভাবিক যে আপনিও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবার না হবার সম্ভাবনাও আছে। আপনার বংশে যদি মানসিক সমস্যা থেকে থাকে, যে কোন ধরনের অবসাদের লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্রই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দিন। হতে পারে সেটা কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে বা কোন ধরনের ওষুধ গ্রহন করার মাধ্যমে।

প্রচলিত কথাঃ মানুষ বার্ধক্যের কারনে ডিপ্রেশনগ্রস্থ হয়
বেশীরভাগ মানুষই ডিপ্রেশনগ্রস্থ না হয়েও বার্ধক্যের অন্যান্য সমস্যার মোকাবেলা করে থাকে। আর যদি এমন কিছু ঘটেও থাকে, তারা সেগুলো উপেক্ষা করে। বয়স্ক মানুষেরা তাদের সমস্যাগুলো লুকিয়ে রাখাতে পারে বা তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা ভিন্ন রুপে দেখা দিতে পারে, যেমন- খাবারের স্বাদ না পাওয়া, ব্যথা বেদনা বেড়ে যাওয়া, ঘুমের ধরন বদলে যাওয়া ইত্যাদি। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারনে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডিপ্রেশন বেড়ে যায়, এবং হতাশা তাদের হার্ট অ্যাটাক বা সার্জারি থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়।

আসল বিষয়ঃ ডিপ্রেশন হলো ডিমেনশিয়ার অনুরূপ
বয়স্কদের মধ্যে হতাশাই মস্তিষ্কের সমস্যা, বিভ্রান্তি এবং কিছু ক্ষেত্রে দৃষ্টি ভ্রান্তির মূল কারণ হতে পারে। চিকিৎসকেরা প্রায়ই বয়সজনিত সমস্যার লক্ষনের সাথে অবসাদের সমস্যাকে মিলিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে বয়স্কদের এসব স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা, ডিপ্রেশন দূর করা সম্ভব। যেসব বয়স্ক মানুষেরা ডিপ্রেশন সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছেন, সাইকো থেরাপি তাদের জন্য খুবই উপকারী বিষয় হতে পারে।

প্রচলিত কথাঃ কথা বলার মাধ্যমে সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে
একসময় নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে তাতে মনোনিবেশ করতে বারণ করা হতো। এখন, বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে, অভিজ্ঞদের সাথে সমস্যা নিয়ে কথা বলার মাধ্যমে অনেক সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব। বিভিন্ন ধরণের সাইকোথেরাপির দ্বারা মানসিক, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা ঠিক করার মাধ্যমে হতাশার প্রতিকার করা সম্ভব। প্রথম পদক্ষেপটি হলো মানসিক ডাক্তারের সাথে কথা বলা।

আসল বিষয়ঃ ইতিবাচক চিন্তা করা ফলদায়ক হতে পারে
খুব পুরনো একটি পরামর্শ হলো, ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে অবসাদের প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। একে বলা হয় কগনিটিভ বিহেভিওর থেরাপি (সিবিটি)। এর মাধ্যমে মানুষ নতুন ভাবে চিন্তা ও আচরন করতে শেখে। আত্মকেন্দ্রিক ও নেতিবাচক চিন্তা ও আচরন সনাক্ত করে সেগুলোর বদলে নিজের ও সবার জন্য আরও বেশি ইতিবাচক চিন্তা করতে শেখানো হয়। শুধু এই থেরাপি বা ওষুধের পাশাপাশি হোক, সিবিটি এর ফলে অনেক মানুষই উপকৃত হয়েছেন।

প্রচলিত কথাঃ টিন এজাররা স্বভাবতই অসুখী
যদিও অনেক টিন এজাররা মুডি, যুক্তিবাদী এবং নেতিবাচক বিষয় দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয় বেশি, তবে দীর্ঘদিন হতাশ বা ডিপ্রেশনগ্রস্থ থাকা কিশোর-কিশোরীদের পক্ষে স্বাভাবিক নয়। যখন ডিপ্রেশন দু'সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তখন এটি হতাশার চিহ্ন হতে পারে, যা হতাশার প্রায় ১১ টি লক্ষনের মধ্যে একটি। যেসব লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে যে সেই টিনেজারের সাহায্যের প্রয়োজন সেগুলো হলো, বন্ধুদের সাথে ক্রমাগত মনোমালিন্য হওয়া, কোন বিষয়ে খুশি না হওয়া, হঠাৎ করে রেজাল্ট খুব খারাপ করা ইত্যাদি।

আসল বিষয়ঃ অনুশীলন করা খুব ভালো ওষুধ
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন অবসাদের চিকিৎসায় সাহায্য করে, এমনকি হালকা অবসাদের ক্ষেত্রে অনুশীলন ওষুধের মতো কাজ করে। কোন গ্রুপের সাথে বা বন্ধুদের সাথে শারীরিক অনুশীলন করার ফলে সামাজিক সম্পর্ক মজবুত হয়, যা ডিপ্রেশন দূর করতে আরও বেশি সহায়তা করে।

প্রচলিত কথাঃ অবসাদের চিকিৎসা করা খুব কঠিন
আসল বিষয় হলো, যারা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা ডিপ্রেশন থেকে ভালো হতে চান তারা খুব দ্রুত এর থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০%মানুষের ডিপ্রেশন ওষুধের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। যদিও ওষুধ সব ক্ষেত্রে জরুরী নয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, টক থেরাপি ও ওষুধের সমন্বয়ের চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আসল বিষয়ঃ এটা সবসময় ডিপ্রেশন নাও হতে পারে
জীবনের অনেক ঘটনাই আমাদের সাময়িকভাবে দুঃখী ও ডিপ্রেশনগ্রস্থ করতে পারে, কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যা নাও হতে পারে। প্রিয়জনের মৃত্যু, ডিভোর্স, চাকরি হারানোর পর, বড় ধরনের কোন অসুখ হলে সাময়িকভাবে হতাশায় ডুবে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে, যখন হতাশা নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়ে, তখন অবশ্যই তার চিকিৎসা করা দরকার। চরম হতাশা কাটিয়ে ওঠার সময়েও মানুষ অনেকসময়ই অন্যমনস্ক হয়ে কিছু সময়ের জন্য আনন্দ খুঁজে নেয়, এটাই স্বাভাবিক।

আসল বিষয়ঃ ভালো দিনের আশা রাখাই সঠিক
খুব বেশি অবসাদে আক্রান্ত হলে মানুষ ভাবে, তার সামনে হয়তো আর কোন ভালো দিন আসবে না। হতাশা অসুস্থতার একটি অংশ, বাস্তবতা নয়। সঠিক চিকিৎসার ও ইতিবাচক চিন্তার মাধ্যমে ধীরে ধীরে নেতিবাচক বিষয়গুলো দূর করা সম্ভব। ডিপ্রেশন কমার সাথে সাথে ঘুম ও ক্ষুধার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। ফলে যারা নিয়মিত কাউন্সিলর বা ডাক্তারের পরামর্শমতো চলতো, তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত হতে শুরু করে।

এই পাতাটি ৫৪২বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626