রাজডক - Rajdoc
Banolata-2023-03-09.gif
Banolata-2024-03-09.gif

ডাঃ এর সিরিয়াল দিন

বাইপোলার ডিসঅর্ডার, লক্ষন কারন ও প্রতিকার

১৪-০৯-২০২০

বাইপোলার ডিসঅর্ডার, লক্ষন কারন ও প্রতিকার

বাইপোলার ডিসঅর্ডার কি?
বাইপোলার ডিসঅর্ডারকে অনেক সময় ম্যানিয়াক ডিপ্রেসন বলা হয়, যার ফলে খুব ঘন ঘন মন মেজাজ পরিবর্তন হয়। হয়তো এই মুহূর্তেই অনেক বেশি খুশি, আবার পরের মুহূর্তেই প্রচণ্ড অবসাদগ্রস্থ। মন মানসিকতা পরিবর্তনের স্থায়িত্ব ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

ডিপ্রেসন ফেজটির লক্ষণ সমূহ
বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি চিকিৎসাধীন না হয় তাহলে তার মধ্যে ডিপ্রেসনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে দুঃখ, উদ্বেগ, শক্তি হ্রাস, হতাশা এবং মনোনিবেশ করতে সমস্যা। তারা উপভোগ করত এমন ক্রিয়াকলাপে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। সাধারণত ওজন বাড়া বা কমা, খুব বেশি বা খুব কম ঘুমানো এবং আত্মহত্যার কথা চিন্তা করা, অবসাদের এই পর্যায়টির অন্যতম প্রধান লক্ষণ সমূহ।

যখন কেউ ম্যানিক হয়
এই পর্যায়ে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মধ্যে অতিরিক্তএনার্জি অনুভব করে এবং তারা যে কোন কিছু করতে পারে বলে মনে করে। তাদের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং তাদের পক্ষে স্থির থাকা শক্ত। তারা খুব বেশি কথা বলে, সহজেই বিভ্রান্ত হয়, তারা পর্যাপ্ত ঘুমায় না। এটি তাদের প্রায়শই বেপরোয়া আচরণের দিকে পরিচালিত করে, যেমন প্রতারণা করা, দ্রুত গাড়ি চালানো, সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করা ইত্যাদি। এক সপ্তাহের জন্য প্রায় প্রতিদিন এই লক্ষণগুলির মধ্যে যদি কমপক্ষে তিনটিও দেখা দেয়, তবে একে একটি “ম্যানিক পর্বের বা ধাপের” সংকেত হিসেবে ধরে নিতে হবে।

বাইপোলার ১ বনাম বাইপোলার ২
বাইপোলার ১ ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য ম্যানিক পর্যায়গুলি থাকে। অনেকের আবার আলাদা আলাদা ডিপ্রেশন পর্যায়ও রয়েছে। যাদের খুব বেশি ডিপ্রেশন রয়েছে, তবে পূর্ণ ম্যানিক এপিসোডগুলির পরিবর্তে তাদের নিম্ন-গ্রেড হাইপোমানিক সুয়িং রয়েছে যা কম তীব্র এবং এক সপ্তাহেরও কম সময় ধরে থাকতে পারে, তারা বাইপোলার ২ এ আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে জীবন খুব সুন্দর মনে হলেও তারকাছের মানুষেরা তাদের মেজাজের পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করতে পারবে।

মিশ্র ধাপ বা পর্ব কি?
অনেক সময় বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের একই সাথে হতাশা এবং ম্যানিয়া উপসর্গ দেখা দেয়। একে মিশ্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত ম্যানিক বা ডিপ্রেশন পর্ব বলা হয়। এর ফলে মানুষ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করে, যেমন হতাশা, আত্মহত্যার চিন্তা, বিপজ্জনক ঝুঁকি গ্রহণ করা। সাধারণত মহিলাদের মধ্যে এবং অল্প বয়সে বাইপোলার ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত লোকদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

কারণগুলি কী কী?
বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সঠিক কারন এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয় যে জিনগত, জৈবিক বা পরিবেশগত কারনে এই ব্যাধি হতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, এই অসুস্থতার কারনে মানুষ চিন্তা ভাবনা করার শক্তি, মেজাজ হারিয়ে ফেলে অস্বাভাবিক আচরন করে।

কার ঝুঁকি বেশি
নারী ও পুরুষ উভয়েরই এই সমস্যা হবার সমান ঝুঁকি রয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে, ১৫-৩০ বছর বয়সের মধ্যেই লক্ষণসমূহ দেখা যায়। তবে, খুব কম ক্ষেত্রে শৈশবেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই অসুখ অনেক সময় পরিবার থেকেই আসে, তবে পরিবারের সবার মধ্যেই এমন সমস্যা থাকবে তেমনটি নয়।

এটা কিভাবে দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে
নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে বাইপোলার ডিসঅর্ডার অনেক ধরনের পারিপার্শ্বিক অনেক বিষয়কে প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্থ করে, যেমন- চাকরি, ঘুম, পারিবারিক জীবন, স্বাস্থ্য, অর্থ ইত্যাদি। এর ফলে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে অন্যদের জন্য বিপদজনক করে তোলে। এটা আপনার কাছের মানুষদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ, যারা হয়তো আপনাকে সহায়তা করতে চায় কিন্তু বুঝতে পারে না যে আসলে আপনার সমস্যা কি!

ঝুঁকিপূর্ণ আচরন
বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকেই ড্রাগস বা মদ আসক্ত হয়ে থাকেন। তারা তাদের অসুবিধা গুলো ভুলে থাকার জন্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমানে পান করে থাকেন। এর ফলে একসময় মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ আচরন করতে শুরু করে।

আত্মহত্যার চিন্তা
সাধারন মানুষের তুলনায় বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ১০-২০% বেশি। এছাড়া তাদের মধ্যে বার বার আত্মহত্যার কথা বলা, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

চিকিৎসকেরা এটি কীভাবে নির্ণয় করেন
বাইপোলার ডিসঅর্ডার নির্ণয়ের একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ হলো খুব বেশি মুড সুইং।তবে,কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে সেটা আলাদা বিষয়। আপনার ডাক্তার আপনাকে একটি চেকআপ দেবে এবং আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে। আপনাকে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষাও করতে হতে পারে। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাধারণত এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করার পরে সমস্যা নির্ণয় করেন। আপনার মেজাজ এবং আচরণে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে কিনা তা জানতে তিনি আপনাকে ভাল জানেন এমন লোকদের সাথেও কথা বলতে পারেন।

এই সমস্যায় কোন ওষুধ দেওয়া হয়?
বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য বিভিন্ন ধরণের নির্ধারিত ড্রাগ রয়েছে। এর মধ্যে মুড স্টেবিলাইজার রয়েছে যা মুড সুইং এর ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।এর পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এবং অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ। পুনরায় সংক্রমণ এড়াতে, সমস্যা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও এই ওষুধ গুলো গ্রহণ করা হয়।

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য টক থেরাপি
কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে মানুষ ওষুধ না গ্রহন করেও তাদের জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারে। জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (Cognitive behavioral therapy) মানুষের মেজাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিন্তা ভাবনা এবং আচরণগত পরিবর্তনেও ফোকাস করে থাকে। আন্তঃব্যক্তিক থেরাপির (Interpersonal Therapy) মূল লক্ষ্য হলো স্ট্রেন বাইপোলার ডিসঅর্ডারটি দূর করা । সামাজিক ছন্দ থেরাপি (Social Rhythm) মানুষকে প্রতিদিনের রুটিনগুলিকে আরও ভালো করতে ওসেগুলো ঠিক রেখে চলতে সহায়তা করে।

আপনার করনীয় কি?
প্রতিদিনের অভ্যাস বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিরাময় করতে পারে না। তবে আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমান, নিয়মিত খাবার খান এবং অনুশীলন করেন, এগুলো আপনাকে সমস্যা মোকাবেলা করতে সহায়তা করবে। অ্যালকোহল এবং বিনোদনমূলক ড্রাগগুলি এড়িয়ে চলুন, কারন এর ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। আপনার যদি বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকে,তাহলে সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটা জানুন। যদি সত্যিই আপনি বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব এর সম্ভব্য নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহন করুন।

ইলেক্ট্রোকনভুলসিভ থেরাপি-ইসিটি (Electroconvulsive Therapy-ECT)
এই চিকিৎসায় সাধারণ অ্যানেশেসিয়ার মাধ্যমে ঘুমন্ত অবস্থায় বাইপোলার ডিসঅর্ডারের সমস্যা গুলো দ্রুত উন্নতি করতে পারে। এক্ষেত্রে, মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক প্রবাহ ব্যবহার করা হয়। মারাত্মক উপসর্গগুলি সহজেই ও খুব দ্রুতঠিক করার জন্য এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই কার্যজকর। যখন ওষুধ এর দ্বারা খুব বেশি কাজ হয় না, সেক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোকনভুলসিভ থেরাপি-ইসিটি একটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকর চিকিৎসা।

কাছের মানুষদের জানান
আপনার যদি বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকে তবে আপনি আপনার সঙ্গী বা নিকটাত্মীয়, পরিবারের মতো আপনার কাছের লোকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন, যাতে তারা আপনার সমস্যাটি বুঝতে পারে ও সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে পারে। এটি কীভাবে আপনাকে এবং আপনার জীবনকে প্রভাবিত করে তা বোঝানোর চেষ্টা করুন। তাদের সহায়তায় আপনার চিকিৎসা আপনার জন্য আরও সহজ ও কার্যকরী হতে পারে।

কারও সম্পর্কে উদ্বিগ্ন?
বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অনেকেই বুঝতে পারেন না যে এটা তাদের কোনসমস্যা, তাই তারা সে বিষয় এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার কোন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের এই সমস্যা হয়েছে, তাহলে আপনি তাদের চিকিৎসক বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন যাতে তারা কী ঘটছে তা সন্ধান করতে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নিতে পারে। তাদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল হন এবং মনে রাখবেন এটি নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞের দরকার। তবে এটি বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা অন্য কোনও মানসিক রোগ যাই হোক না কেন,যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভব।

এই পাতাটি ৪৬৪বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য প্রবন্ধ



যোগাযোগ
প্যারামেডিকেল রোড
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী
Email: info@rajdoc.com
Phone: +8801753226626