নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী। এ ছাড়া এতে শিথিলায়ন হয় বা মানসিক চাপ কমে। এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন:
পার্সড লিপ ব্রিদিং
এ শ্বাস ব্যায়াম বায়ুপথগুলো দীর্ঘক্ষণ উন্মুক্ত রাখতে পারে, যার ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচল সহজতর হয়। যেভাবে পার্সড লিপ ব্রিদিং করবেন:
* সোজা হয়ে বসুন।
* নাক দিয়ে ধীরে, নিয়ন্ত্রিতভাবে গভীর শ্বাস টানুন।
* একটি ঠোঁটকে অপর ঠোঁটের সঙ্গে ভালোভাবে চেপে রাখুন, কিন্তু মাঝখানে একটু ফাঁক রাখুন। এটাকে বলে পার্সড লিপস।
* পার্সড লিপসের মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। আদর্শগতভাবে, শ্বাস ছাড়ার ধীরতা শ্বাস গ্রহণের দ্বিগুণ হওয়া উচিত।
সময়ের ওপর খেয়াল রেখে কিছু লোক দারুণ উপকার পেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ৫ সেকেন্ডে শ্বাস টেনে ১০ সেকেন্ডে শ্বাসত্যাগ। সময় দেখতে সামনে একটা ঘড়ি রাখুন। যারা শারীরিক সক্রিয়তায় তেমন যুক্ত থাকেন না অথবা শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশিকে ঘনঘন ব্যায়াম করান না তারা পার্সড লিপ ব্রিদিং থেকে বিশেষ উপকার পেতে পারেন।
বেলি ব্রিদিং
আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশনের এ ব্যায়াম ফুসফুস প্রসারণ ও সংকোচনে উন্নয়ন ঘটাতে পারে। বেলি ব্রিদিং নির্দিষ্টভাবে ডায়াফ্রাম পেশিকে শক্তিশালী করে তোলে, যা একজন মানুষকে গভীর শ্বাস নিতে সমর্থ করে। যেভাবে বেলি ব্রিদিং করবেন:
* পাকস্থলির ওপর একটি হাত রাখুন ও অপর হাতকে রাখুন বুকের ওপর।
* ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং পেট প্রসারিত হচ্ছে কিনা খেয়াল করুন। এসময় বুক প্রসারিত হবে না।
* মুখ দিয়ে শ্বাস ছেড়ে দিন।
* আবারও নাকের মাধ্যমে শ্বাস টানুন। কিন্তু এবার পেটের প্রসারণ যেন পূর্বের চেয়ে বেশি হয়।
* আবারও মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এবারের শ্বাসত্যাগের সময়টা যেন পূর্বের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি হয়।
শ্বাস গোনার ব্যায়াম
এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ
ব্যায়ামে ফুসফুসের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় না, কিন্তু ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। ফুসফুসের সুরক্ষায় কিছু করণীয় হচ্ছে:
ধূমপান থেকে বিরত থাকা, প্রচুর পানি পান করা ও শারীরিক সক্রিয়তায় যুক্ত থাকা। আপনার দৈনন্দিন কাজের সময় শ্বাসকষ্ট, শ্বাসক্রিয়ার সময় ব্যথা ও দীর্ঘদিন বিদ্যমান কাশির মতো ফুসফুসীয় অসুস্থতার উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ফুসফুস সমস্যার চিকিৎসা যত তাড়াতাড়ি শুরু করবেন তত বেশি ফল পাবেন।